নিউজ ডেস্ক:
শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে লালমনিরহাট। সবখানে উন্নয়নের দৃশ্যমান ছোঁয়া লেগেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় যাহা আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই জেলা এক সময় দেশে বিদেশে শিক্ষা নগরী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্র্রই ব্যবসা-বাণিজ্যে ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার স্বর্ণদ্বারে পরিণত হতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের আমলে উত্তরাঞ্চল হতে চিরতরে মঙ্গা নামের অভিশাপ অভাবকে বিতাড়িত হয়ে গেছে। করোনায় সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়লেও মঙ্গা ফিরে আসতে পারেনি উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। এতেই প্রতীয়মান হয় মঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান এসেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উত্তরের জেলাগুলোতে। এই সরকারের আমলে ’৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের ভূ-খন্ড হয়ে গেছে দেশের সম্পদ। সুবিধাবঞ্চিত এসব বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এখন সমৃদ্ধি অর্জনের পথে। জেলার এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে লালমনিরহাট জেলা শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ, শিক্ষা সমৃদ্ধ, যোগাযোগ সমৃদ্ধ, পর্যটন সমৃদ্ধ, শিল্প কলকারখানা সমৃদ্ধ দেশের প্রথম ধাপের অর্থনৈতিক সূচকের জেলা হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকবে। ঘুচে যাবে দরিদ্র্রপীড়িত মঙ্গার জেলা, মফিজের জেলার কলঙ্কিত অধ্যায়ের।
উত্তরের লালমনিরহাট জেলা এক সময় অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে সুখ্যাতি ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এই জেলা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার স্বর্ণদ্বারখ্যাত। এই জেলা হতে রেলপথে ট্রেনে চেপে সুদূর করাচি, কুচবিহার, দার্জিলিং যাওয়া যেত। ভারতবর্ষের সঙ্গে রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথে যোগাযোগ ছিল। সেই সময় জেলায় ছিল বেশ কয়টি বৃহৎ শিল্প কলকারখানা, সাবান তৈরি কারখানা, সয়াবিন তৈল পরিশোধনাগার, বিশাল অত্যাধুনিক অটোমিশন রাইস মিল, ছোট বড় শিল্প কলকারখানা, স্বর্ণ আশখ্যাত পাটের ব্যবসা, রেলওয়ে কারখানা, রেলওয়ের ৫০ মেগা ওয়ার্ডে কুইক রেন্টাল পাওয়ার হাউস। এই জেলা হতে ভারতবর্ষে ও উত্তরের জেলাগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হত। মারওয়ারি ব্যবসায়ী ও বাঙালী ব্যবসায়ীরা এখানে প্রধান প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। এখানে ভারতবর্ষের প্রথম ঘুরর্ণিয় মান মঞ্চ (১০টি দৃশ্যের) নিয়ে আধুনিক সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যাহা রেলওয়ে এমটি হোসেন ইনিস্টিটিউট নামে পরিচিত। সেই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ আধুনিক বিমানবন্দর ও ঘাঁটি ১৭৬০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভৌগলিক গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রিটিশ সরকার এখানে বিমানবন্দর ও ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। যাতে তারা এখান হতে পুরো ভারতবর্ষে সামরিক বাহিনী ও আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ করেছিল। শক্তিশালী রাডারের একটি এখানে রয়েছে।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জেলার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি সদ্য স্বাধীন দেশের বিমানবাহিনীর ঘাঁটি লালমনিরহাট জেলায় চালু করেছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল এখানে বিমান বাহিনীর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করবেন। থাকবে আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটি। জেলা তিস্তা নদীতে কাকিনায় বৃহত্তর সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এই অঞ্চলের নদী পথগুলোকে চালু করতে চেয়েছিলেন। কলকারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে প্রথম ২১ বছর পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসে। সেই সময় উত্তরের এই জেলায় উন্নয়নের বীজবপন হয়। শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু সেই উন্নয়ন স্থায়ীরুপ নিতে পারেনি। মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও স্থুল কারচুপির মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়। পুনরায় ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাই ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে প্রায় দেড়শত কিঃমিঃ রেলপথ ও প্রায় ১৩-১৪টি রেলওয়ে স্টেশন কাউনিয়া টু লালমনিরহাট টু পাটগ্রাম রেললাইন পুনর্¯’াপন ও সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিটি রেলস্টেশন রিমডেলিং করা হয়েছে। এতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সিভিল এ্যাভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিভিল এ্যাভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়) চালু হয় লালমনিরহাটে। এখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৭শত একর জমির ওপর ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা ক্যাম্পাসে। তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা শেখ হাসিনা সড়ক সেতু (কাউনিয়া) ও শেখ হাসিনা দ্বিতীয় সড়ক সেতু (মহিপুর) নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে রংপুরের সঙ্গে এই জেলার দূরত্ব প্রায় ১২ কিঃ মিঃ কমে এসেছে। এই জেলার কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর শেখ হাসিনা দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এতে জেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরীর সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। নদী দিয়ে বিচ্ছিন্ন উপজেলা দুটি সড়কপথে সংযোগ তৈরি হয়েছে। একশত শয্যার আধুনিক হাসপাতালটিকে আড়াইশত শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে ৮তলা আধুনিক ভবন। জেলা সরকারী নার্সি ইনস্টিটিউট চালু হয়েছে, লালমনিরহাট সরকারী কলেজে একাধিক বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে, সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বুড়িমারী স্থলবন্দর আধুনিকরণ, বুড়িমারী স্থলবন্দরে ই-ম্যানেজমেন্ট চালু হয়েছে, পার্সপোট অফিস চালু, আধুনিক সার্কিট হাউস সম্প্রসারণ হয়েছে, কালীগঞ্জে বিশেষায়িত এক শ’ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে, লালমনিরহাট হতে সরাসরি ঢাকা আধুনিক নতুন ইন্টারসিটি নতুন কোচে ট্রেন চালু করা হয়েছে, পুলিশ লাইনে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, জেলার প্রতিটি থানায় ওসি সাহেবদের নতুন পিকআপ ও টহল ভ্যান দেয়া হয়েছে, প্রায় প্রতিটি সরকারী বেসরকারী বিদ্যালয়ে সরকারীভাবে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, নতুন পুরানো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিশু ও শিক্ষাবান্ধব একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, এই জেলায় ঢাকা হতে সেনাবাহিনীর সামরিক পাইলট ট্রেনিং স্কুল ও সেন্টারটি লালমনিরহাটে হস্থান্তর করা হয়েছে, এখানে ২২ মিলিটারি ব্রিগেডের অধীনে শিক্ষা পল্লীর কার্যক্রম চালু হয়েছে, এই জেলায় নতুন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ চালু হয়েছে। বিমানবাহিনীর পরিত্যক্ত রানওয়ে সংস্কার করে বিমানবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টারের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। বিমানবাহিনী ও আর্মি ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হয়েছে। পিপিআই প্রজেক্টের অধীনে ডায়াবেটিক এক শ’ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ ও হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। সেখানে স্বল্পখরচে জেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে আধুনিক অক্সিজেন গ্যাসের মজুদ প্লান্ট নির্মাণ করে করোনাকালীন সময় চালু করা হয়েছে।
জেলায় তিস্তা নদী খনন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। একনেকে পাস হয়েছে। এই জেলায় বুড়িমারী স্থল বন্দর হতে রংপুরের পায়রা বন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার আধুনিক স্পেসওয়ে মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বুড়িমারী হতে লালমনিরহাট শহর হয়ে ঢাকা ৮ লেন আন্তর্জাতিক মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা টু রংপুর পর্যন্ত কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে পর্যায়ক্রমে এ কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। সেনাবাহিনীর ২২ শিক্ষা ব্রিগেডের অধীনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারীভাবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মহেন্দ্রনগরে একটি ইপিজেড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলার আদিতমারী অথবা কালীগঞ্জে সরকারীভাবে একটি পলিটেকনিক কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। হাতীবান্ধা এই জেলার ব্যান্ডিং ফসল ভুট্টা পোসেসিং কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাইজেশন কর্মসূচী গ্রহণ। তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাইজেশন কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করা অন্যতম লক্ষ্য। কারণ তারা অধিকতর উদ্যোগী ও বৃদ্ধিদীপ্ত। অন্যান্য অগ্রাধিকার কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষার প্রসার ও বিকাশ সাধন করে মানব সম্পদের উন্নয়ন, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া ও দুর্নীতি প্রতিরোধ। তাছাড়া বৈশ্বিক আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি, বন্যা বাঁধ ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবার কল্যাণ সাধন, স্বাস্থ্য ও প্রজনন সেবা প্রদান, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, দেশজ সংস্কৃতি বিকাশ, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন, রেলওয়ে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু কল্যাণ ইত্যাদি। বিভাগীয় প্রশাসন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইভটিজিং প্রতিরোধসহ বিভিন্ন অপরাধসমূহ প্রতিরোধে মোবাইল কোর্টসমূহ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ দমন ও ১৯৭১ এর মানবতাবিরোধী এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার কার্যক্রমে বিভাগীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাইজেশন কর্মসূচীর মাধ্যমে ই-সেবাসমূহ পৌঁছে দেয়া অন্যতম প্রাধিকার কর্মসূচী। লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের তিস্তা সেতুর উদ্বোধন হয় ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ হয় লাখো মানুষের স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছেন। ঘুড়িয়ে দেন অত্র অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা। তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় রংপুর- ঢাকসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এছাড়া এ পথে পাটগ্রামের বুড়িমারী সীমান্ত হয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী, যাত্রী এবং পর্যটকদের বিড়ম্বনা লাঘব হয়েছে। পাশাপাশি তিস্তা রেলসেতু অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে এবং এ পথে যানবাহন চলাচলে থাকছে না কোন প্রতিবন্ধকতা। লালমনিরহাট জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এই তিস্তা সড়ক সেতুটি।