নিউজ ডেস্ক:
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর মধ্যেই এবার দেশের বিভিন্ন জেলায় পেট্রল পাম্পগুলোতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব অভিযানে পরিমাপে তেল কম দেয়ার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঠাকুরগাঁও ও নোয়াখালীর ১৬টি পেট্রল পাম্পকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার খবর দিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
রোববার দুপুরে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিকের নেতৃত্বে বিভিন্ন পাম্পে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে কিশোরগঞ্জ সদরের পাবইকান্দি এলাকায় হিমু ফিলিং স্টেশনকে দেড় লাখ টাকা ও গোল্ডেন অয়েল কোং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
হৃদয় রঞ্জন বণিক নিউজবাংলাকে জানান, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে হিমু ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তারা প্রতি পাঁচ লিটারে পেট্রল ২২০ মিলিলিটার, অকটেন ৮০ মিলিলিটার ও ডিজেল ৫০ মিলিলিটার কম দিচ্ছে।
অন্যদিকে গোল্ডেন অয়েল কোং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনে প্রতি পাঁচ লিটারে পেট্রল ৩৭০ মিলিলিটার, অকটেন ৩৭০ মিলিলিটার করে ক্রেতাদের কম দেয়া হচ্ছে।
অভিযানের সময় জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর চন্দ্র পাল এবং জেলা পুলিশের উপপরিদর্শক বদিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক
রোববার দুপুরে এ জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আছাদুল ইসলাম।
তিনি জানান, কুমিল্লা বিএসটিআই অফিসের সহায়তায় জেলার পদুয়ার বাজার, আলেখারচর ও কালাকচুয়া বিশ্বরোড এলাকায় অন্তত ১২টি ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে তাদের সরবরাহ করা তেলের পরিমাপ করা হয়।
এ সময় পরিমাপে কারচুপি করায় সাওরাতলী পদুয়ার বাজার এলাকার রিভারভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা এবং কালাকচুয়া এলাকার ইস্ট জোন ফিলিং স্টেশনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান আছাদুল ইসলাম।
চুয়াডাঙ্গা: তেল কম দেয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে চুয়াডাঙ্গার দুটি ফিলিং স্টেশনকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার বেলা ২টার দিকে ওই অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ।
তিনি জানান, ফিলিং স্টেশনে কম তেল দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকানো হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরে মেসার্স কে এম ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে অভিযোগের সত্যতা মেলে এবং দেখা যায় প্রতি পাঁচ লিটার জ্বালানি তেলে ১০০ এমএল করে কম দেয়া হচ্ছিল। পরে ওই স্টেশনটিকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেসার্স দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনকে আমদানিকারকের ট্যাগ ও মূল্যবিহীন মবিল বিক্রয়ের অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরে মেসার্স কে এম ফিলিং স্টেশনকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম ও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ্ শোয়াইব এই জরিমানা করেন।
অভিযানে নির্ধারিত মাপের চেয়ে কম দেয়ায় মেসার্স ইসরাইল তালুকদার ফিলিং স্টেশনকে ৫০ হাজার ও মেসার্স কলেজ রোড ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া নগরীর কাশিপুর এলাকার সুরভী পেট্রল পাম্পে সবকিছু সঠিকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দেখা গেছে।
বরিশালের একটি পাম্পে অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবলে তেল কম দেয়ায় দুই পাম্পকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা এ অভিযান চালান। তিনি জানান, পেট্রল ও অকটেন পরিমাপে কম দেয়ার অভিযোগে বাহুবলের চেরাগ আলী পেট্রল পাম্পকে ২০ হাজার টাকা এবং মিরপুরে নিরাপদ পেট্রল পাম্পকে একই অভিযোগে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে সহযোগিতা করে শায়েস্তাগঞ্জ র্যাব-৯-এর একটি দল।
রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বাদমালঞ্চি এলাকায় অবস্থিত সোনার ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ওই জরিমানা করেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন।
তিনি জানান, জরিমানা করা পাম্পটিতে প্রতি পাঁচ লিটারে পেট্রল ২১০ মিলি, অকটেন ও ডিজেল ১৮০ মিলি করে কম দেয়া হচ্ছিল।
নওগাঁয় অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামীম হোসেন
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের একটি ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সদর উপজেলায় ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় মেসার্স জননী ফিলিং স্টেশনকে এই অর্থদণ্ড দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক সেলিমুজ্জামান।
তিনি জানান, জেলার চারটি ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে মেসার্স জননী ফিলিং স্টেশনে অনিয়ম পাওয়া যায়। সেখানে পাঁচ লিটার ডিজেলে ২৩০ মিলি করে কম দেয়া হচ্ছিল। পরে ওই পাম্পকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে পঞ্চবটি ও ফতুল্লা এলাকার তিনটি পাম্পে অভিযান চালিয়ে কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর: মাপে কম দেয়ায় জেলার দুটি ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রোববার বেলা ২টার দিকে জেলা শহরের গ্লোরি ফিলিং স্টেশন ও হাজি আব্দুল জলিল ফিলিং স্টেশনকে এ জরিমানা করা হয়।
শরীয়তপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সুজন কাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ন্যায্যমূল্যে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে জেলার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দেখা যায়, হাজি আব্দুল জলিল ফিলিং স্টেশনের দুটি মেশিনে প্রতি পাঁচ লিটারে ৮০ মিলি এবং গ্লোরি ফিলিং স্টেশনের তিনটি মেশিনে ৮০ থেকে ১৭০ মিলি তেল কম দেয়ায় প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে এ দুটি পাম্পকে ৫০ হাজার করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
শরীয়তপুরের দুটি ফিলিং স্টেশনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে লিটারে ১৩০ মিলি করে কম দেয়ায় একটি ফিলিং স্টেশনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
রোববার দুপুরে উপজেলার গোগর ইউনিয়নের আব্দুর রহিম ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ওই জরিমানা করা হয়।
ঠাকুরগাঁও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ সাদি জানান, জনস্বার্থে এই অভিযান চলমান থাকবে।
নোয়াখালী: ১০ লিটারে ৬২০ মিলি অকটেন কম দেয়ায় জেলা শহরের একটি ফিলিং স্টেশনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রোববার দুপুরে জেলার দত্তেরহাট এলাকায় সাজ্জাদ ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।