গত দুই তিন দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে তালিকা ভাইরাল হয় তা প্রিন্ট করা হয় দৈনিক মানবজমিন অফিসে। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তাদের ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। তালিকাটি টাইপ করানো হয় দৈনিক মানবজমিনের রিপোর্টার আলামিনকে দিয়ে। মানবজমিন পত্রিকা সূত্রে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ডেভিড বার্গম্যান ছাড়াও ফোনের অপর-প্রান্তে লন্ডনে আরেকজন ছিলেন যার সাথে মতিউর রহমান চৌধুরী ও আসিফ নজরুল বাংলায় কথা বলেছেন, তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মানবজমিনের অভ্যন্তরীণ সূত্রটি জানায়, রোববার বিকেলে সাড়ে ৫টায় মানবজমিন অফিসে আসেন আসিফ নজরুল। মতিউর রহমান তখন তার রুমে অবস্থান করছিলেন। মতিউর রহমান ডেকে পাঠান তার বিশ্বস্ত রিপোর্টার আল আমিনকে। তাকে তিনি পাপিয়া কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি সংবাদ লিখতে বলেন। আল আমিন জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো সুনির্দিষ্ট করে কারো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। কারণ পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে এখনো তারা ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি। মতিউর রহমান তাকে এরপর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কিছু গসিপ যুক্ত করে নিউজ করতে বলেন। এসময় আসিফ নজরুল বলেন, আজকের নিউজের মধ্যে কোন নাম না দিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কিছু মন্ত্রী, এমপি, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও কিছু ব্যবসায়ীকে ইঙ্গিত করবা।
এমন সময় মতিউর রহমান বলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাবেক সাংবাদিক মাহবুরের বানানো দুটি ইউটিউব ভিডিওর তথ্যের সহায়তা নেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হবার পর মাহবুব দেশ থেকে পালিয়ে লন্ডন চলে যায়। এরপর থেকে মাহবুব লন্ডনে তারেক রহমানের মিডিয়ার সেলের সাথে কাজ করে।
আলামিন সংবাদটি লিখে দিলে মতিউর রহমান নিজে সংবাদটি এডিট করেন। আসিফ নজরুল সেখানে কিছু লাইন যুক্ত করেন। এর পরদিন সোমবার বিকেলে মানবজমিন অফিসে আবার আসেন আসিফ নজরুল। সঙ্গে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত নামের একজন দন্ত চিকিৎসক। তারা সেখানে বসে দেশের বাইরের কোন একজনের সাথে কথা বলেন। আসিফ নজরুল বলেন, কাজ অনেকটা হয়ে গেছে, এখন নাম যুক্ত করতে হবে। এরপর তৈরি করেন কাল্পনিক একটি তালিকা। সেখান থেকে মতিউর রহমান ফোন করেন ক্রাইম রিপোর্টার এসোসিয়েশনের নেতা আবু সালেহ আকনকে। আবু সালেহ আকন এখনো প্রকাশ্য জামাত করেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রাইম রিপোর্টারদেরকে একইভাবে ব্রিফিং করার জন্য । কারণ এই ধরনের সংবাদ মিডিয়া হাউজগুলোতে ক্রাইম রিপোর্টারদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আবু সালেহ আকন ক্রাইম রিপোর্টারদেরকে জনে জনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ডেকে নির্দেশনা মোতাবেক ব্রিফিং দেন। তারা যেন তাদের অফিসে গিয়ে বলে এরা এরা জড়িত।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আলামিন তালিকা তৈরি করে নিয়ে আসেন। যেখানে মতিউর রহমান ও আসিফ নজরুলের নির্দেশনা মত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নাম বসানো হয়। আসিফ নজরুলের মতামত অনুযায়ী সেখানে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য দলের এমপিদের নাম, ব্যবসায়ীদের নাম ঢুকানো হয় তালিকাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য। প্রিন্ট করা কপি থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলেন আসিফ নজরুল। এরপর তা বিভিন্ন বিশ্বস্ত জায়গায় পাঠিয়ে দেন।
বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যে বা যারাই কথিত তথ্য হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশ এবং প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।