নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস)। এসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তসহ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি এক মন্তব্য প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের নির্মূলের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। পাকিস্তান এখনো ‘চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে’, আর তাদের দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক।
ইএফএসএএস তাদের ওয়েবসাইটে গত ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড পাকিস্তান : অ্যাক্টিং অ্যাগেইনস্ট এক্সট্রিমিজম ভারসাস মেকিং এ শো অব অ্যাক্টিং অ্যাগেইনস্ট এক্সট্রিমিজম’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনামেই চরমপন্থা নির্মূলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ব্যাপক পার্থক্যের বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে, অথচ পাকিস্তান নিচ্ছে ‘লোক-দেখানো’ পদক্ষেপ। প্রতিবেদনটিতে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলায় এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই মুসলিম দেশের গৃহীত নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির স্পষ্ট পার্থক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
আমস্টারডামভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইএফএসএএসের গবেষণার ক্ষেত্র দক্ষিণ এশিয়া।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম এবং পাকিস্তানের তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) কার্যক্রম তুলে ধরে ইএফএসএএসের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গোষ্ঠী দুটি নিজ নিজ দেশের সরকারের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সহিংস বিক্ষোভে জড়িয়েছে।
গোষ্ঠী দুটির সহিংসতার বিপরীতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নেওয়া ভূমিকা টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ব্যাপক সহিংসতার পর হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযানে নামে পুলিশ। এই প্রেক্ষাপটে হেফাজত তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
অথচ পাকিস্তানে টিএলপি দেশটি থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক করতে সরকারকে বাধ্য করে। সম্প্রতি ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রচারের পর ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে রাজপথে নামে টিএলপি। একই সময়ে বাংলাদেশে হেফাজতের কয়েক হাজার কর্মীও ঢাকায় ফরাসি দূতাবাস ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়। পরে তাদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ইএফএসএএস বলেছে, ‘এটা প্রমাণিত যে শেখ হাসিনার সরকার হেফাজতকে মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে, সেখানে পাকিস্তান এ ব্যাপারে নাটকীয় সংকটে পড়ে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি এবং টিএলপির মতো গোষ্ঠীকে মোকাবেলায় দুর্বল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এই ৫০ বছরে এমন সময়ও গেছে, যখন এই দেশে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে আশ্রয়, প্রশ্রয় ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটা বিশেষভাবে সত্য যখন অতীতে পাকিস্তানের প্রভাব অনেকটাই এর চালিকাশক্তি ছিল। তবে গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি বিস্তৃত ও ধারাবাহিক সন্ত্রাসবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বিভিন্ন বর্ণের চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে।’