হামিদুর রহমান মিঞা:
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী তাদের ক্যাম্প ছেড়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পরতো। নারী লোভী আর্মিদের নজর ছিল আমাদের মা বোনদের উপরে। তাদের দ্বারা অনেক মেয়েকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। তেমনি একটা প্রত্যক্ষ ঘটনা স্ববিস্তারে তুলে ধরছি।
জুন মাসের ১ম সপ্তাহে দুজন পাকিস্তানী আর্মি ঘোড়ায় চড়ে আমাদের গ্রামে আসে। ঘোড়াকে আমাদের বারান্দার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। তারপর গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের খুঁজতে থাকে। এদিকে পাক বাহিনীর ঢোকার খবর পেয়েই নারীপুরুষ সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়েছে। আমরা কয়েকজন মুচীপাড়া খালের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে খাল থেকে উপরে উঠতেই দেখি আর্মিরা দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। শঙ্কিত মনে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম।
এদিকে হায়েনারা এক বয়স্ক মহিলাকে দেখতে পেয়ে সেদিকে এগোয়। সামনে মিলিটারী দেখে হতচকিত হয়ে মহিলাটা তার হাতে থাকা পানি ভর্তি বালতি তাদের পায়ের উপরে ফেলে দিয়েই দৌড় দেয়। পায়ে আঘাত পেয়ে উর্দুতে গালিগালাজ দিতে থাকে। এদিকে বৃদ্ধ মহিলা ( মেহেরজান) এক দৌড়ে এলাকা ছাড়া।
খালের ধারে গিয়ে পানি দেখে একজনকে ডাক দেয়। লোকটার নাম ঝড়ু মন্ডল, সে কাছে আসার পর আর্মিরা বলতে থাকে, লড়কীকা কাঁহাছে যারাহো। সে কোন উত্তর দেয় না। পরবর্তীতে বলতে থাকে তুম মুসলিম অর মালাউন হো। এবার ঝড়ু মামা বলে উঠে ইয়ে হায় হায়। তাদের নির্দেশে ঝড়ু মন্ডল কোলে উঠায়ে তাদের খাল পাড় করে দেয়। আর্মিরা নদীর দিকে যাচ্ছে দেখে আমরাও দুরত্ব বজায় রেখে পিছনে যাচ্ছি।
যখন নদীর কিনারায় আর্মিরা গিয়ে হাজির সেখানে আগে থেকে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সুধীর দাশের স্ত্রী। আর্মির টের পেয়েই সে নদীতে দেয় ঝাপ। মোটা মহিলা পানিতে ঝাপ দেওয়ায় মনে হচ্ছে যেন কুমির মাছ তাড়াচ্ছে। যাইহোক অল্পের জন্য মহিলাটা ইজ্জত রক্ষা করে নদীর উত্তর পাড়ে গিয়ে কিনারায় মৃতপ্রায় পড়ে রইল। আর্মিরা ওখান থেকে ঘুরে এসেই পাড়ার মধ্যে ইসমাইল সরকারের বাড়িতে আশ্রিত ভাতুরিয়া গ্রামের এক মহিলাকে পেয়ে তাদের বুভুক্ষু ক্ষুদার্থের চাহিদা চরিতার্থ করে ক্ষান্ত হয়।
এক সম্ভ্রম হারানো মা ডুকরে কাঁদতে লাগল আর বিলাপের সাথে বলতে থাকে “হে আল্লাহ তুমি এদের বিচার করিও।”
লেখক: হামিদুর রহমান মিঞা, শিক্ষক, রাজনীতিবীদ