একদিকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় পারকি সৈকত, অন্য দিকে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী। পেছনে ছোট-বড় পাহাড়, ঝাউবন ও সবুজের সমারোহ। এই ত্রয়ী মিলনে এক সুতোয় গাঁথা চট্টগ্রামের আনোয়ারার অনন্য সুন্দর পারকি সি-বিচ। সকালে-বিকেলে দেখা মেলে কর্ণফুলী ও পারকি বিচের এক রূপ; সন্ধ্যা ও রাতে ফুটে ওঠে আলো ঝলমলে সাগর ও কর্ণফুলীর অন্য রূপ। পারকি বিচের দুই সময়ের দুই রূপে মুগ্ধ হন যেকোনো পর্যটক।
দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখন এই রূপ দেখার সুযোগ পেলেও রাতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে রাতে সাগরের বুকে ও কর্ণফুলীতে নোঙর করা জাহাজের ঝলমলে আলো-আঁধারির মিতালি উপভোগ করা থেকে আর বেশি দিন বঞ্চিত হতে হবে না পর্যটকদের। কারণ, পারকি বিচের ১৩ একর জায়গায় আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার পর পারকি বিচ হবে দেশের অন্যতম একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ডেপুটি ম্যানেজার (পরিকল্পনা) শিপ্রা দে জানান, ‘আনোয়ারার পারকি বিচ নানা দিক থেকে বাংলাদেশের একটি অনন্যসুন্দর বিনোদন স্পট। এখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু সেখানে রাতে থাকার সে রকম কোনো সুব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে কোনো বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। তাই পর্যটন করপোরেশন ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পারকি বিচকে পর্যটকদের কাছে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে উপহার দিতে পারব আমরা।’
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পারকি বিচকে আধুনিক বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশন তিন বছর মেয়াদি ‘পারকি বিচে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে ১৪টি বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক কটেজ, একটি মানসম্মত বার, দুটি পিকনিক শেড, দুটি কিডস কর্নার জোন, আধুনিক রেস্তোরাঁ, কনভেনশন হল নির্মাণ, চেঞ্জিং ক্লসেট ও ওয়েটিং রুম। কার পার্কিং জোন সুবিধাও রাখা হয়েছে। বর্তমানে পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরির জন্য নির্দিষ্ট ১৩ একর জায়গার চারদিকে ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ করেছে বিপিসি।
এদিকে চলতি বছর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত আধুনিকতার আদলে গড়ে তোলে আওয়ামী লীগ সরকার। নদী আর সাগর মোহনায় এমন সৈকত খুব কমই আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হবে বিশ্বমানের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পর্যটন কেন্দ্র। প্রায় এক হাজার প্রাইভেট কার ও ২শ’ বাস রাখার ব্যবস্থা থাকবে। শহর রক্ষা বাঁধ থেকে সাগর পর্যন্ত তিনটি ধাপে বসার এবং বিনোদনের জন্য থাকবে নানান আনন্দ আয়োজন। নির্দিষ্ট দূরত্বে সিঁড়ি থাকবে সাগরে নামার। সব বয়সী মানুষের বিনোদনের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের রাইড, লাইট হাউস, ক্যাবল কার, টয় ট্রেন, জেটি, ফুড কোর্ট, ফুটওভার ব্রিজ। থাকবে থিম পার্ক, ওয়াটার রাইড ফেরি’স হুইল, কনভেনশন হল, শপিং মল এবং পাঁচ তারকা মানের হোটেল। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও হবে আধুনিক মানের।