শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে এবার হচ্ছে `এনইএসি`

পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে এবার হচ্ছে `এনইএসি`

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাবলিক পরীক্ষার খাতায় একই প্রশ্নের সমান উত্তর লিখে ভিন্ন ভিন্ন নম্বর পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীর মোট জিপিএ নম্বর কম-বেশি হচ্ছে, যা তার সামগ্রিক ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরীক্ষকের ভুলে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফেলও করেছেন। এতে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনা উত্তরণ এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সাম্যতা আনতে স্থাপন করা হচ্ছে ‘জাতীয় শিক্ষা মূল্যায়ন কেন্দ্র- এনইএসি’ নামে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।

যার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সাম্যতা নিশ্চিত ও পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন করা। উন্নত বিশ্বের আদলে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার মান উন্নয়ন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের সার্বিক কৃতিত্ব যাচাই ও উন্নয়নসহ গবেষণা ও প্রশিক্ষণে কাজ করবে। আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে এরই মধ্যে ‘জাতীয় শিক্ষা মূল্যায়ন কেন্দ্র আইন-২০২০’ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৯ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড সভার মাধ্যমে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি হবে বিশেষায়িত ও স্বশাসিত। শিক্ষামন্ত্রী হবেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। সদস্য থাকবেন প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষার দুই বিভাগ ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক

ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমি, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক, এনসিটিবির চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিচালক (প্রশাসন ও যোগাযোগ-এনইএসি), তিনজন প্রধান বিশেষজ্ঞ, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি। মহাপরিচালক বোর্ড সভার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বোর্ড তাকে চার বছরের জন্য পদায়ন করবে।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের মাঝে ফলাফল ও মেধার সমতা আনতে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমানে সমসাময়িক বিশ্বের পরীক্ষা উন্নয়ন ও অধ্যয়নের সাথে বাংলাদেশের পরীক্ষা পদ্ধতির মানের সামঞ্জস্য বিধানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে বৈশ্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এক বিষয় বিশ্বের অন্যান্য দেশে গিয়ে ফের পড়তে হচ্ছে। এনইএসি প্রতিষ্ঠা হলে এবং মান ঠিক রাখতে পারলে খুবই যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে একটি ভার্চুয়াল সভায় সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) আইনের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়, গুণগত শিক্ষা অর্জননির্ভর করে যথাযথ পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ওপর। উন্নতবিশ্বে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- যুক্তরাজ্যে ‘ও কিউ ইউ এ এল’, যুক্তরাষ্ট্রে ‘এন এ ইউ পি’, অস্ট্রেলিয়াতে ‘এ সি ই আর’, ভারতে ‘এন সি ই আর টি’ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন নির্ধারণে কাজ করে।

কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে ২০০২ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছে। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে সফলতা ও দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নয়নে গবেষণা করছে। বেডুর এসব কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

সেসিপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনইএসি খসড়া আইনে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠাটি অন্যতম কাজ হবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন ধারার পরীক্ষা তথা জেএসসি/জেডিসি,এসএসসি/দাখিল/এসএসসি (ভোকেশনাল) এইচএসসি/আলিম ফলাফলের মধ্যে সাম্যতা আনা। এছাড়া পাবলিক পরীক্ষার বিভিন্ন বিভাগ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য আবশ্যিক/বিকল্প বিষয় এবং জিপিএ’র মধ্যে সাম্যতা নিশ্চিত করা। বর্তমানে জিপিএ নির্ধারণে সাম্যতা নেই।

সেসিপ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষকদের ভুলে অসংখ্য শিক্ষার্থী ফেল করে। সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয় না। শিক্ষার্থীরা ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করে ফেল থেকে পাস করে। জিপিএ পরিবর্তন হয়। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করবে এনইএসি।

সেসিপের যুগ্ম পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. সামসুন নাহার বলেন, সেসিপের অন্যতম কর্মসূচি হচ্ছে- পরীক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন। নিয়মিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবলতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।

সেসিপের টিম লিডার ড. আমানুলস্নাহ জানান, এসডিজি অর্জন, শিক্ষানীতি-২০১০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এনইএসি স্থাপন হলে এটি শিক্ষা বোর্ডেও পরিপূরক ও সহযোগিতামূলক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।

বেডুর ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, সঠিক পদক্ষেপ ও তদারকির অভাবে এবং একই ধরনের প্রশ্ন ও গড়পড়তা নম্বর প্রদানের প্রবণতার কারণে উচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থী ও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে গবেষণা ও তদারকি করতে কোনো সংস্থা না থাকায় শিক্ষার গুণগত মান অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

আরও দেখুন

বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …