নিউজ ডেস্ক:
পদ্মা সেতুতে চলাচলের জন্য চীন থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ রেলের ১৫টি বগি। চীন থেকে কেনা এই কোচগুলো পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। দুইদিন আগে আসা বগিগুলোর খালাস কার্যক্রম শুরু হয়। এসব কোচ রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের ১২ নম্বর জেটি থেকে রেলওয়ের ওয়ার্কসপে নেয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও ৮৫টি বগি ধারাবাহিকভাবে আসবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘টয়ো ওয়ার্ল্ড’ দুইদিন আগে চীন থেকে ১৫টি বগি নিয়ে প্রথম চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। ক্রেনের সহায়তায় বগিগুলো জেটিতে নামানোর পর বিশেষ ওয়াগনে করে সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে যন্ত্রপাতি ফিটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে ঢাকার সৈয়দপুর রেল কারখানায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘টয়ো ওয়ার্ল্ড’ এ করে চীন থেকে আনা ১৫টি বগি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। খালাসের কাজও চলমান রয়েছে। রেলের বগিগুলো যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে খালাস হয় সে লক্ষ্যে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের সিএমই তাবাচ্ছুম বিনতে ইসলাম বলেন, প্রথম ধাপে ১৫টি কোচ আমরা পেয়েছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে আমরা ১০০টি কোচ পেয়ে যাব। তিনি বলেন, বিশেষ ব্যবস্থা এসব কোচ চট্টগ্রাম থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কসপে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে। পরবর্তী এসব কোচ দিয়ে পদ্মা সেতু রেলপথে যাত্রী পরিবহন করা হবে।
সিজিপিওয়াই রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী শাহাদাত হোসেন আজাদ বলেন, রেলের বগিগুলো সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে পাঠানো হবে। সেখানে টায়ার লোড এবং এমপ্টি লোডের পর গাড়িগুলো সার্ভিসের লাইনে দেয়া হবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের ফরিদপুরের ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই ৩২ কিলোমিটার লাইনের ওপর দিয়ে গত ১ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালানো হয়েছে। পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভায়াডাক ৪ কিলোমিটার আর মাটির ওপর দিয়ে ২৮ কিলোমিটার। ভায়াডাকের ৪ কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে পাথরবিহীন। আর ২৮ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে পাথর দিয়ে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত দুটি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর ওপর দিয়ে ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন স্টেশন দুটি ও জংশনে চার লেনের লাইন বসানোর কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা স্টেশনটি আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় দ্বিতল পদ্মা সেতুর উপরের চার লেনে যানবাহন চলাচল করছে। নিচতলায় স্প্যানের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতুতে রেল চালুর আশা কর্তৃপক্ষের।