- আর মাত্র ১৪ শতাংশ কাজ বাকি
- বর্তমান সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্র তলদেশ দিয়ে প্রথম প্রতিষ্ঠা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। স্বপ্নের এ টানেল নির্মাণ কাজের আর মাত্র অবশিষ্ট রয়েছে ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি টানেলের উভয়প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোডের কাজও ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর পর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিতব্য টানেলই হবে আরেক চমক।
প্রকল্প দফতর সূত্রে জানা গেছে, টানেলে উপরোক্ত কাজের পাশাপাশি ইলেকট্রোনটিক্যাল কাজের তৎপরতা চলছে। সাংহাই থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুষঙ্গ আসতে বিলম্ব হলেও অন্যান্য কাজ এগিয়ে নিয়েছে চীনের কর্মরত প্রায় আড়াইশ’ কর্মী। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মীবাহিনী।
সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পে যাবতীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ হয়ে আসছে চীন থেকে। চীনে করোনার ধাক্কা সাংহাইসহ বিভিন্ন শহরে আঘাত করার কারণে টানেলের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলেও তা বর্তমানে কাটিয়ে উঠেছে। টানেলের দুটি টিউব প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বহু আগে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারিগরি কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ হারুনুর রশীদ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে জলোচ্ছ্বাসে কোনভাবে টানেল অভ্যন্তরে সমুদ্রের নোনাপানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়টি চউকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। চউক সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার একটি রিং রোড নির্মিত হয়েছে, যার সঙ্গে টানেলের সম্পৃক্ততা থাকছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে নির্মিত হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড। টানেলের দক্ষিণ প্রান্তেও ঘূর্ণিঝড় বা উচ্চমাত্রার জলোচ্ছ্বাসের পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, টানেলের পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শুরু থেকে এ কাজ এগিয়েছে সুষ্ঠুভাবে। টানেল নির্মাণ কাজ শুরুর পর দুই বছরের বেশি সময় করোনার সংক্রমণ থাকলেও এতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। টানেল নির্মাণ কাজে চীনা এবং বাংলাদেশী বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নির্মাণযজ্ঞ এগিয়ে নিয়েছে। যার ফলে সরকার আগামী ডিসেম্বরের শেষদিকে টানেল উদ্বোধনের যে টার্গেট দিয়েছে সে অনুযায়ী সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। মূলত টানেলের খনন কাজের পর দুই টিউবের অভ্যন্তরে একটির সঙ্গে আরেকটির মাঝখানে ক্রসপ্যাসেজ থাকবে তিনটি। এসব ক্রস প্যাসেজ নির্মাণ কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ কাজও এগিয়ে চলেছে সফলতার সঙ্গে। যার কারণে প্রথমটির কাজ ৯০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেল হবে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে। এর মধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের উদ্বোধন করেছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। টানেল নির্মাণে সব সেগমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে চীনের জিন জিয়াং প্রদেশে।