নিউজ ডেস্ক:
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের নতুন দ্বার খুলেছে। তবে এ অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য এত বছর কিছুই ভাবেনি সরকারি দপ্তরগুলো। এখন এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে পর্যটন করপোরেশন। পদ্মা নদীর ওপারে মোটেল নির্মাণের জন্য জমি খোঁজা শুরু করেছে তারা।
পদ্মা সেতুর ওপারে জমি খুঁজতে গত আগস্টে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারসেকশন এলাকা পরিদর্শনে যায় পর্যটন করপোরেশনের একটি প্রতিনিধিদল। পরে অক্টোবরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আলি কদরের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল ভাঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করে।
এসব প্রতিনিধি দলের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটকদের আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য জমি খোঁজা। আবাসিক সুবিধা দিতে মোটেল বানানোর জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি স্থান পছন্দ হয়েছে কর্মকর্তাদের। এর মধ্যে একটি ফরিদপুর পৌরসভা এলাকায় হাসামদিয়া মৌজায়। অন্যটি ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মানমন্দির এলাকায়।
‘পদ্মা সেতুর ওপারে পর্যটকদের জন্য মোটেল বানাতে আরও কত বছর সময় লাগবে তা বলা কঠিন।’
শিবলুল আজম কোরেশি, সভাপতি, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (টোয়াব)
তবে নানা তৎপরতার পরও জমি পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারসেকশন এলাকায় জমির দাম এখন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জমি অধিগ্রহণ পর্যটন করপোরেশনের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণের কাজটি পর্যটন করপোরেশনের আগেই সেরে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু তাদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। তখন জমি অধিগ্রহণ করে রাখলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে থাকত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আলি কদর প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। তাঁদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে আগেই জমি কেনা দরকার ছিল। এই দেরির পেছনে দায়ী আসলে করোনা মহামারি।
পদ্মা সেতু এলাকায় মোটেল নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত করতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে ৬ নভেম্বর চিঠি দেন আলি কদর। চিঠিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তে ভালো মানের কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ, শৌচাগারের সুবিধা নেই। পর্যটক ও আন্তজেলায় যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুবিধা নেই। পর্যটকদের জন্য এ ধরনের সুবিধা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসককে লেখা চিঠিতে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু এলাকায় পর্যটনসুবিধা বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। সেতুর ওপারে পর্যটনসুবিধা বাড়াতে মনোরম পরিবেশে আবাসিক সুবিধা দিতে চায় পর্যটন করপোরেশন। ঢাকা থেকে দুটি প্রতিনিধিদল ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় পরিদর্শন করেছে। সেখানে দুটি এলাকা তাদের পছন্দ হয়েছে।
পছন্দ হওয়া হাসামদিয়া এলাকায় এবং মানমন্দির এলাকায় জমি চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসককে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। বলা হয়, জমির বিস্তারিত তথ্য বিশেষ করে জমির তফসিল, পরিমাণ, দামসহ মৌজার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে।
পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আলি কদর প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। তাঁদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই অঞ্চলে আগেই জমি কেনা দরকার ছিল। এই দেরির পেছনে দায়ী করোনা মহামারি।
পর্যটন করপোরেশন বলছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারসেকশন এলাকায় মোটেল বানানোর পাশাপাশি মোংলায় একটি আধুনিক মানের হোটেল বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত সরকারি মোটেলের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারসেকশন পর্যন্ত একদিনের পদ্মা সেতু ভ্রমণ প্যাকেজ চালু করা হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, জমি চিহ্নিত করা সংক্রান্ত পর্যটন করপোরেশনের একটি চিঠি পেয়েছেন। হাসামদিয়া ও মানমন্দির এলাকাসহ অন্য এলাকায়ও জমি খোঁজা হচ্ছে। পর্যটকদের যাতায়াত, তাঁদের আবাসিক ও রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে পছন্দমতো জমি খোঁজা চলছে।
পর্যটনশিল্পের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর ওপারে আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল পর্যটন করপোরেশনের। সেতু হয়ে যাওয়ার কারণে জমির দাম বেড়ে গেছে। এখন জমি কিনতে চাইলে বেশি দামে কিনতে হবে।
আবার কেউ এখন জমি ছাড়তেও চাইবেন না। তিনি বলেন, আমলতান্ত্রিক জটিলতা ও অদক্ষতার কারণে জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। তাই সেখানে পর্যটকদের জন্য মোটেল বানাতে আরও কত বছর সময় লাগবে তা বলা কঠিন।