- প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ ভাগ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৭ স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। এতে সেতুর ৫ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। আর নদীর স্রোত প্রত্যাশিত লেভেলে থাকলে অবশিষ্ট চারটি স্প্যান আগামী ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৯তম বোর্ড সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সেতু বিভাগের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন শেষে সংশ্লিষ্টদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। সেতুমন্ত্রী আরও জানান, চট্টগ্রামে দুটি টিউব সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) প্রায় ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের বাস্তব ভৌত অগ্রগতি শতকরা ৬০ শতাংশ।
এ সময় সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, বোর্ড সভার অন্য সদস্যসহ সেতু বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টীল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান।
সম্প্রতি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত রেললাইন জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। এছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা-পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ দেয়া হবে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নতমানের রেল স্টেশন স্থাপন করা হবে।
মাদারীপুরের শিবচরের পাচ্চরে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সুবিধার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে মন্ত্রী পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ এলাকা পরিদর্শন করেন।
করোনভাইরাস মহামারীর কারণে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ২০২২ সালের আগে নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চললেও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হওয়া নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ কতদিনে শেষ হবে বা প্রকল্পের খরচ বাড়ছে কিনা এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে কাজ শেষে হবে।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে ২০২১ বলা হয়েছিল। সে সময় এ ধরনের ভাইরাস আমরা চিন্তা করিনি; সেজন্য বলছিলাম ২০২১ সালে শেষ করব। সেটি সবারই প্রত্যাশা ছিল। সে অনুযায়ী কাজ চলছিল এবং কাজটি সুন্দরভাবে এগিয়ে চলছিল।
পরিপূর্ণভাবে আমাদের ধারণা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে আমরা আমাদের মানুষদের উপহার দিতে পারব। আনফরচুনেটলি এই করোনাভাইরাস সবকিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে; প্রকল্পটিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।