শনিবার , এপ্রিল ২০ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / পদ্মা-মেঘনা নদীর নামেই হচ্ছে নতুন দুই বিভাগ

পদ্মা-মেঘনা নদীর নামেই হচ্ছে নতুন দুই বিভাগ

নিউজ ডেস্ক:

অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে নতুন দুটি বিভাগ। দেশের বিখ্যাত দুই নদী ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’র নাম অনুসারে দুটি প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলা নিয়ে হতে যাচ্ছে পদ্মা বিভাগ। অন্যদিকে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী- এর তিনটি করে জেলা নিয়ে হচ্ছে মেঘনা বিভাগ। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিতব্য প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে নতুন বিভাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই বৈঠকে একটি থানা ও একটি পুলিশ ক্যাম্পের নাম পরিবর্তন, একটি নতুন পৌরসভা গঠন, একটি পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণ এবং দুটি উপজেলার সীমানা পুনর্গঠনের প্রস্তাবও উঠতে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে সশরীরে বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। এদিন সচিবালয়ে পরপর দুটি বৈঠকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় পার করবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সকালে নিকারের বৈঠক, এরপর সচিবদের নিয়ে সচিব সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণত বছরে একবার সচিব সভা হয়। এতে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কার্যালয়ের সচিবরা অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর চাপ কমানো এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে প্রায় এক দশক আগে থেকেই নতুন বিভাগ গঠনের আলোচনা হচ্ছে। এবার সেটা বাস্তব রূপ পাচ্ছে। ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলা- ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর নিয়ে পদ্মা বিভাগ হচ্ছে। এ ছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর- এই ছয়টি জেলা মিলে মেঘনা বিভাগ হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। এর সবক’টিই সংশ্নিষ্ট বড় শহরের নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে। এবারই প্রথম স্থানীয় শহরের নামের বাইরে বিভাগের নামকরণ হতে যাচ্ছে। এ দুটি বিভাগ অনুমোদন পেলে মোট বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টিতে। বিভাগ হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক ইউনিট। এর পরই রয়েছে জেলা ও উপজেলার অবস্থান।

নদীর নামে বিভাগের নেপথ্যে: কুমিল্লা ও ফরিদপুরের স্থানীয় রাজনীতিকরা তাঁদের শহরের নামেই বিভাগ চেয়েছিলেন। নিজেদের শহরের নামে বিভাগ পেতে নোয়াখালীর বাসিন্দারাও ব্যাপক চেষ্টা-তদবির করেছেন। বিশেষ করে কুমিল্লার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে নদীর নামে বিভাগের নামকরণ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। স্থানীয় নেতারা একাধিকবার কুমিল্লা নামে বিভাগ দাবি করলেও সরকারপ্রধান সেটা নাকচ করে দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কুমিল্লার নামের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের নাম জড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, বিভাগের ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুটি বিভাগ বানাব আমাদের দুটি নদীর নামে। একটি পদ্মা, একটি মেঘনা। ওই সময় যুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ফরিদপুর বিভাগ করব; কিন্তু ‘ফরিদপুর’ নাম দিচ্ছি না, সেটার নাম হবে পদ্মা। কারণ, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা। এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। নাম ভিন্ন হলেও মেঘনা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে কুমিল্লা ও পদ্মা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে ফরিদপুর।

ছয়টি উপজেলা, থানা ও পৌরসভা: নিকার বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ নামকরণ করতে প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প’কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প’ নামকরণের প্রস্তাব এসেছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দুটি পৌরসভা ও একটি উপজেলার বিষয়ে পৃথক তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় পৌরসভা গঠন এবং ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের প্রস্তাব রয়েছে। এ বিভাগ থেকে তৃতীয় প্রস্তাটি হচ্ছে- বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ও বোয়াইল ইউনিয়নের বিরোধপূর্ণ অংশ বিয়োজন করে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সংযোজন করে মাদারগঞ্জ উপজেলার সীমানা পুনর্গঠন।

সচিব সভার আলোচ্যসূচিতে ১০ বিষয়: এদিকে রোববার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভা অনুষ্ঠানের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। সভার আলোচ্যসূচিতে ১০টি বিষয় উল্লেখ করে সব সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আলোচ্যসূচিতে থাকা বিষয়গুলো হচ্ছে- খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ এবং পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা, সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, সুশাসন ও শুদ্ধাচার বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারণ। এর বাইরে বিবিধ প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনার বিষয়টিও আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সমকালকে জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা শুরু হওয়ার পর সচিবালয়ের কোনো বৈঠকে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে সচিবালয়ে যাননি। এ হিসেবে প্রায় তিন বছর পর সচিবালয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান।

আরও দেখুন

নাটোরে গাঁজা সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর 

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে পৃথক দুইটি অভিযানে  ১৮ কেজি গাঁজা সহ রুহেল আহমেদ (২৬) ও  গোলাম …