শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / পণ্যমূল্য কমানোর কৌশল থাকবে নতুন বাজেটে

পণ্যমূল্য কমানোর কৌশল থাকবে নতুন বাজেটে

নিউজ ডেস্ক:

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলক্ষ্যে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার কৌশল থাকবে নতুন বাজেটে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করা হয়। এ কারণে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার।

নতুন বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট উপস্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে তিনি বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ভালো আছে, আগামীতে আরও শক্তিশালী হবে। আজ বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। 

জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সর্বক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই প্রতিফলন থাকবে নতুন বাজেটে। বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে অর্থবিভাগ। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, বাণিজ্য সংগঠন, বিভিন্ন চেম্বার এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকে সবার মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।

এর বাইরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। সবার মতামতের ভিত্তিতে এবার ব্যয় সাশ্রয়ী বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার সম্প্রতি বলেন, এবারের বাজেট জনগণের বাজেট হবে। আমাদের হতাশার কিছু নেই। আমরা ১ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে শুরু করেছিলাম। এবার আমরা ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট করব।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রক্রিয়ায় সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সরকার কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির অনুসারী নাই, কল্যাণমূলক অর্থনীতির অনুসারী। কল্যাণ অর্থনীতিতে চলছে বাংলাদেশ। আসন্ন বাজেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়িয়ে দরিদ্রদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়া এবং রপ্তানি আয় ও  রেমিটেন্স বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেট প্রণয়নে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠক হবে।

জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অন্তত ১৫ জন সিনিয়র সচিব ও সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করবেন। এতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত বাজেট, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মন্ত্রণালয় বিভাগওয়ারী আয়-ব্যয়সীমা ও প্রস্তাবিত বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরা এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের ২০২৫-২৬, হতে ২০২৬-২৭ অর্থবছরের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়সীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে। জানা গেছে, ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করায় আগামী বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৩ হাজার কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হতে পারে। 
এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যয় কমানো হয়েছে ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কাটছাঁট শেষে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৫ কোটি টাকা। সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এবং মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সংকোচনমূলক নীতি নিয়ে বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধিত বাজেটের আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত বরাদ্দের অতিরিক্ত  কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ করার জন্য সম্প্রতি হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে উল্লেখ করা হয়, এর পরও যদি প্রয়োজনে কোনো খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ অর্থ বিভাগ অনুমোদন করে তাহলে তা এই সংশোধিত কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হবে। এসব ক্ষেত্রে পরে সম্পূরক বা অতিরিক্ত আর্থিক বিবৃতির মাধ্যমে যথাসময়ে নিয়মিত করা হবে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দেয় সরকার।

কিন্তু অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো বেশ চাপে ছিল। এ অবস্থায় সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধনে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রস্তাব দেয় অর্থ বিভাগ। 
ওই সভায় সম্মতি পেয়ে অর্থ বিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করে। এবার মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটের আকার কমেছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছর এ হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের পর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমাতে বাধ্য হলো সরকার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

কিন্তু অর্থবছরের মাঝপথে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় এক শতাংশ হ্রাস করে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া টানা পাঁচ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থাকলেও চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির টার্গেট দিয়েছিলেন ছয় শতাংশ। কিন্তু এই সীমার মধ্যে কোনো অবস্থায় মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে এখন মনে করা হচ্ছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু বছর শেষে এটিই ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি শেষ পর্যন্ত সাত শতাংশের উপরেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। 
এ ছাড়া গত ১১ মার্চ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমিয়ে সংশোধন করা হয়। মূল এডিপির তুলনায় মোট বরাদ্দ কমেছে ১৮ হাজার কোটি। কাটছাঁট শেষে সংশোধিত এডিপি বা আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এদিকে গত অক্টোবরে এডিপি থেকে ১১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ স্থগিত করতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ তহবিলে অর্থ খরচ হয়নি, তাই সংশোধিত বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে সরকারি ব্যয়ে বড় কাটছাঁট করা হলেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা সে হারে কমানো হয়নি। কারণ আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি অর্থবছর সরকারকে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে হবে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের সার্বিক রাজস্ব আদায় ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বেশ চাপে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া বাড়তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংকোচনমূলক নীতিতে বাজেটও সংশোধন করা হয়েছে। সাময়িকভাবে এটা ঠিক আছে। তবে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাবে। এ উন্নয়ন টেকসই করতে বাড়তি সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। তাই আগামীতে রাজস্ব বাড়াতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে উৎপাদন বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ চক্র ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হবে।

এ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। তার পরও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত পূরণে ইতোমধ্যে কিছু  চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে অর্থনীতিতে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …