দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে। ‘বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে যাব না’ বিএনপি এমন ঘোষণা দিলেও নির্বাচনমুখী কর্মকান্ডই পরিচালনা করছে মাঠের বিরোধী দলটি। বসে নেই আওয়ামী লীগও। চলছে নির্বাচনী জোর প্রস্তুতি।
বিএনপির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে- এটা ধরে নিয়েই ১৪-দলীয় জোটগতভাবে ভোটে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগের। আর জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়েই ভোটে যাবেন শরিক দলের নেতারা। জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বেশ টানাপোড়েন চলছিল। ক্ষমতার ভাগাভাগি তথা মন্ত্রিসভায় জায়গা না পাওয়া নিয়েই এ টানাপোড়েন শুরু। যতই সময় পেরিয়েছে দূরত্ব ততই বেড়েছে। যে কারণে গত দুই বছরে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় রাজপথে একাই ছিল আওয়ামী লীগ। অবশেষে জোট শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব নিরসন হতে চলেছে। আজ বৈঠকে বসছেন জোটের শরিক দলের নেতারা। বেলা ১১টায় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সমসাময়িক রাজনীতি, প্রস্তাবিত বাজেট, আগামী সংসদ নির্বাচনের কর্মপন্থা নিয়েও আলোচনা হবে বলে একাধিক সূত্র জানায়। জোট শরিক দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন হয়েছে আদর্শগত দিক বিবেচনা করে। তাই ওই আদর্শের বিষয়টি যতদিন অটুট থাকবে ততদিন জোটের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকবে না। প্রয়োজন হলে একসঙ্গে রাজপথে অবস্থান নেওয়া যাবে। সামনে নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচনে জোটের প্রতীক নিয়েই ভোট করা হবে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভোটের মাঠে জোটের প্রতীক (আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা) নিয়েও ভোট করা যাবে। আমার দলের প্রতীক (মশাল) নিয়েও ভোট করা যাবে। জোটের প্রতীক নিয়ে ভোট করা যাবে না- এটা তো কোথাও বলা নেই। কারণ আমরা তো জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেব।’ ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি (রাশেদ খান মেনন), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, গণ আজাদী লীগ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয় পার্টি-জেপি ও তরীকত ফেডারেশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করে। শরিকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতেও বলা হয়। শরিকদের যে নিজস্ব শক্তিতে চলতে বলা হয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিগত সময়ে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনের দুটি শরিকদের দেয় আওয়ামী লীগ। একটি ওয়ার্কার্স পার্টি, অন্যটি জাসদকে দেওয়া হয়। আসন ছেড়ে দিলেও তাদের নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। বগুড়া-৪ আসনে জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিমকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের সঙ্গে। সেখানে মাত্র ৮৩৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন জাসদের প্রার্থী। আর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৪ দল থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী জামানতই হারিয়েছেন। এ ধরনের একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় কার কিংবা কার ব্যর্থতা- এসব প্রশ্নই এখন আওয়ামী লীগের শরিকদের আলোচনায়। এ নিয়েও ক্ষোভ ছিল শরিকদের মধ্যে। শরিক দলের নেতারা বলছেন, ১৪ দল গঠনের লক্ষ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক উন্নয়নমূলক সমাজ গঠনের। সে লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে মনোমানিল্য থাকলেও জোটভুক্ত হয়েই নৌকা নিয়ে ভোটে যাবে শরিকরা। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চাওয়া-পাওয়ার জন্য তো জোট করিনি। জোট করেছিলাম কিছু নির্দিষ্ট এজেন্ডা সামনে রেখে। আমাদের লক্ষ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক উন্নয়নমূলক সমাজ গঠনের। সেদিকেই এগোচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করতে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের সময় জোটের প্রতীক কোনটা হবে, তা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নৌকা হলে নৌকা নিয়েই ভোট করব।’ গত সংসদ নির্বাচনে জোটের শরিকদের মধ্যে একমাত্র নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করেছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও নিজস্ব প্রতীকে ভোট করার ইচ্ছা দলটির। তবে জোটের কারণে নৌকা নিতে হলেও আপত্তি নেই বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রতীক বাইসাইকেল নিয়েই ভোট করতে চাই। কিন্তু পরিস্থিতি ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। প্রয়োজনে নৌকাও নিতে হতে পারে।’ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভোটের এখনো কিছু সময় বাকি আছে। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হলে নৌকা নিয়েই ভোট করতে হবে।’ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রবিবার ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে অনেক বিষয় আলোচনা হবে। সেখানে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ও আসতে পারে। তবে প্রতীক কী হবে, কারা কত আসন পাবে, তা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত করা হবে।