নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঢাকা ও দিল্লি উপকৃত হতে পারে। কারণ এটি হবে সবুজ জ্বালানি ও সস্তা। বুধবার সকালে গণভবনে সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ লোক বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। যেখানে গ্রিড লাইন নেই, সেখানে সরকার সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারির ধকল সামলে উঠে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থার দিকে ফিরছে। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। এ সময় হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের ছোটখাটো কিছু বিষয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজেবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমরা চাই, এ সমস্যার সমাধান হোক।’
করোনার ওমিক্রন ধরন নিয়ে সবাই সতর্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় ২১ জনের শরীরে নতুন এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলো ছাড়াও করোনার এই ধরন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়েছে।
শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানান। শ্রিংলা কোভিড-১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, ভারতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি (শ্রিংলা) ধন্যবাদ জানান এবং একে ‘বন্ধুত্বের বিশেষ বন্ধন’ হিসাবে উল্লেখ করেন।
শ্রিংলা বলেন, ভারত বিশ্বজুড়ে নিজের মিশনগুলোয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী পালন করবে। এছাড়া ওইসব দেশের স্থানীয় জনগণের মাঝেও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরবে। তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে জাতিসংঘে ভারত ও বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি যৌথ ছবির প্রদর্শনী করা হবে।
শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশে-ভারত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চায়। শিলিগুড়ি-পার্বতীপুর, ঢাকা-শিলিগুড়ি এবং ঢাকা-জলপাইগুড়ি রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা অশোক মল্লিক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রদান : ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ৩০টি প্রতিষ্ঠান ও কারখানাকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রদান করেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মালিক-শ্রমিকসহ সবাইকে সব সময় একটা অনুরোধই করব, মালিক-শ্রমিকের একটা সুন্দর সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মালিকদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এই শ্রমিকরা শ্রম দিয়েই তাদের কারখানা চালু রাখে এবং অর্থ উপার্জনের পথ করে দেয়। পাশাপাশি শ্রমিকদের এ কথাটা মনে রাখতে হবে যে, এই কারখানাগুলো আছে বলেই তারা কাজ করে খেতে পারছেন। তাদের পরিবার প্রতিপালন বা নিজেরা আর্থিকভাবে উপার্জন করতে পারছেন। কাজেই কারখানা যদি না চলে, তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে।’
শ্রমিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে, সেই কারখানার প্রতি আপনাদের যত্নবান হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে শিল্প-কলকারখানা, উৎপাদন এবং রপ্তানি যদি সঠিকভাবে চলতে হয়, তাহলে কারখানাগুলো যথাযথভাবে যাতে চলে এর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি সেখানে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে রপ্তানি যেমন বন্ধ হবে, সেখানে কর্মপরিস্থিতি থাকবে না এবং নিজেরাও কাজ হারাবেন। তখন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরতে হবে। সেকথা মনে রেখে শ্রমিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করতে হবে। কাজেই এখানে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালিকদের যেমন শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে, শ্রমের ন্যায্যমূল্য এবং সঠিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই শ্রমিকদেরও দায়িত্ব থাকবে কারখানাটা সুন্দরভাবে যেন চলে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সভাপতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মনোনীত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পোশাক খাতের ১৫টি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের তিনটি এবং চা শিল্প খাতের চারটি, চামড়া শিল্প খাতের দুটি, প্লাস্টিক শিল্পের তিনটি এবং ওষুধ শিল্প খাতের তিনটি কারখানা। পরে প্রধানমন্ত্রী শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল এবং শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের ৮টি নবনির্মিত ভবনও ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।