নিউজ ডেস্ক:
হিমালয়কন্যা নেপালে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ। সেখানে খাদ্যসামগ্রী, কৃষিপণ্য, ওষুধসহ ৭ পণ্যের রপ্তানি চাহিদা বাড়ছে। করোনা মহামারীতে বাংলাদেশি ওষুধ রপ্তানি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ অবস্থায় নেপালে ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির দীর্ঘস্থায়ী বাজার তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি ও নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক চিঠিতে বলা হয়- নেপালে খাদ্যসামগ্রী, কৃষিপণ্য, নিট ফেব্রিক্স, পাল্প, পোলট্রি ফিড, এডিবল অয়েল, ওষুধ ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। করোনা মহামারীর সময়ে নেপালে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নেপালে এসব পণ্যের বাজারের আকার হচ্ছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার। দেশটিতে এ পণ্যের অন্যতম রপ্তানিকারক হচ্ছে ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পত্রে আরও বলেছে- করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারত ওষুধ রপ্তানি বন্ধ করায় নেপালের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বাংলাদেশের ওষুধ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে এ সময়ে নেপালে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ও অন্যান্য পণ্যের একটি দীর্ঘস্থায়ী বাজার তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র নেপালে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা থাকলেও আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। দেশটি ৯০ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর। নেপাল ২৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস পণ্য, সিরামিক পণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, ফার্নিচার ও দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডের ভালো বাজার হতে পারে নেপাল। পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী, কৃষিপণ্য, ওষুধসহ ৭ পণ্যের চাহিদা বাড়ছেই। এই সুযোগ নিতে সরকারি উদ্যোগ চাই। বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়। তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশ থেকে আলু নিতে পারে নেপাল। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত বানশিধর মিশ্র সম্প্রতি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী নেপাল। জলবিদ্যুৎ ও পণ্য বাণিজ্যে দুই দেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্রাজিলের পর নেপালের অবস্থান। এ খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করলে দুই দেশই লাভবান হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে- নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে খুবই আগ্রহী। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে উভয় দেশ প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে সম্ভাব্য পিটিএতে ৬২টি পণ্য নিয়ে পর্যালোচনা করেছে দুই দেশ। পিটিএর আওতায় বাংলাদেশ থেকে নেপালে ৪২টি পণ্য রপ্তানি হবে। অন্যদিকে নেপাল ২০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। দেশটি কফি, চা, সিমেন্ট ক্লিংকার, বোতলজাত পানি এবং জুয়েলারির মতো পণ্য রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও পাটজাতপণ্য, ব্যাটারি, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধ, সিরামিকস, ইলেকট্রনিকস ও খাদ্যপণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে নেপালের সঙ্গে এই পিটিএ হবে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে পর্যটক গেছে ৪০ হাজার। বর্তমানে চার-পাঁচ হাজার নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ছে। নেপালে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে এসব ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখছেন বাংলাদেশি কোম্পানির ওষুধ। ফলে বাংলাদেশের ওষুধের ভালো একটা বাজার তৈরি হয়েছে নেপালে। বর্তমানে ৮টি কোম্পানি নেপালে ওষুধ রপ্তানি করে। অন্যদিকে নেপালের বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ বহুমাত্রিক সম্ভাবনার।