- সব ক্ষেত্রেই এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন
হাওড়-বাঁওড় ও গারোপাহাড় অধ্যুষিত এক প্রান্তিক জেলা নেত্রকোনা। ১৯৮২ সালে এটি মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়। ১০ উপজেলা, পাঁচটি পৌরসভা ও ৮৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। ধান, মাছ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আর লোকসংস্কৃতির দিক দিয়ে এ জেলা অগ্রগণ্য। কিন্তু উন্নয়ন বিবেচনায় কিছুদিন আগেও নেত্রকোনার পরিচিতি ছিল পশ্চাৎপদ জেলা হিসেবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত এক যুগে নেত্রকোনা উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠে গেছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি- সব ক্ষেত্রেই এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। গোটা জেলা জুড়ে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ।
জেলা প্রশাসন, গণপূর্ত অধিদফতর, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, পাউবোসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত এক যুগে এ জেলার নানা খাতে অন্তত ৭-৮ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নপ্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও কিছু কাজ।
যোগাযোগ ॥ নেত্রকোনা জেলার উন্নয়নবঞ্চনার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল যোগাযোগের অব্যবস্থা। জেলা সদর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের সড়কগুলো ছিল অনুন্নত ও অপ্রশস্ত। এমনকি হাওড়দ্বীপখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলাটি সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল জেলা সদর থেকে। কিন্তু গত এক যুগে এখানকার সড়ক যোগাযোগ খাতে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাজ বর্তমানে চলমান। জানা গেছে, বর্তমানে সড়ক বিভাগের উদ্যোগে ৩শ’ ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া, ৩শ’ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা, ২শ’ ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-ঈশ্বরগঞ্জ, ১শ’ ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ, ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়ক উন্নয়ন, পাকাকরণ ও প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। ২শ’ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুরের সীমান্ত থেকে ধর্মপাশার সীমান্ত পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। এ ছাড়া পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ থেকে দুর্গাপুরের বিরিশিরি পর্যন্ত ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ৩শ’ ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক। জেলা সদরের সঙ্গে হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মদন উপজেলার উচিতপুর থেকে খালিয়াজুরীর রসুলপুর পর্যন্ত ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সাব-মার্সিবল সড়ক। এ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে গহীন হাওড়ের বুকেও ছুটছে আধুনিক যন্ত্রযান- যা একদিন স্বপ্নের মতো ছিল সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে। জেলা সদরের বহু কাক্সিক্ষত বাইপাস সড়কেরও কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে নেত্রকোনার রেল যোগাযোগেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এখানকার রেলপথ যেন আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। রাজধানীর কমলাপুর থেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত চালু হয়েছে ‘হাওড় এক্সপ্রেস’ ও ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ নামে দু-দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন। এছাড়াও কমলাপুর-মোহনগঞ্জ এবং কমলাপুর-পূর্বধলা রুটে চালু হয়েছে ‘মহুয়া’ ও ‘বলাকা’ নামে আরও দু’টি কমিউটার ট্রেন। একই সঙ্গে আধুনিকায়ন করা হয়েছে প্রতিটি রেল স্টেশন ও রেলপথ।
শিক্ষা ॥ গত ১০ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন ঘটেছে নেত্রকোনায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েকটি ঘোষণা গোটা জেলাবাসীকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। নেত্রকোনার সন্তান সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে হাওড়-বাঁওড় অধ্যূষিত এ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানান। তাতে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৮’ পাস হয় এবং জেলা সদরের রাজুরবাজারের টিটিসি ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২ হাজার ৬শ’ ৩৭ দশমিক ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাজুরবাজার এলাকায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৫শ’ একর জমি। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৪৪টি প্যাকেজের অবকাঠামো নির্মাণকাজ।
২০১৮ সালে এইচএসসির ফলাফল ঘোষণার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থীর অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেত্রকোনায় একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণাটি বাস্তবে রূপ নেয়। ২০১৯ সালে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু হয় ‘নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজ’ এর পথচলা। বর্তমানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম চলছে। স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের জন্য চলছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই জেলার ৬শ’ ৫০টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৯টি কলেজ জাতীয়করণ (সরকারীকরণ) করা হয়েছে। নতুন করে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুরের সরকারী হাজী আলী আকবর ডিগ্রী কলেজ, মোহনগঞ্জ সরকারী কলেজ, কেন্দুয়া সরকারী কলেজ এবং জেলা সদরের নেত্রকোনা সরকারী মহিলা কলেজ ও আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন দু’টি কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর একটির নাম হেনা ইসলাম কলেজ। বর্তমান সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপির উদ্যোগে সদর উপজেলার চল্লিশা এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানের উদ্যোগে মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওড়াঞ্চলখ্যাত আদর্শনগর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শহীদ স্মৃতি কলেজ। ইতোমধ্যে এ কলেজটি এমপিওভুক্তও করা হয়েছে।
জেলার প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেখ্যাত নেত্রকোনা সরকারী কলেজের দ্বিতল প্রশাসনিক ভবনটিকে পাঁচতলায়, তিনতলা বিশিষ্ট কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনটিকে পাঁচতলায় এবং দ্বিতল বিজ্ঞান ভবনটিকে পাঁচতলায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে ছয়তলা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস-২। দূরের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে একটি কলেজবাস। মদনের সরকারী হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রী কলেজেও চলছে পাঁচতলা বিশিষ্ট ছাত্র হোস্টেল এবং ছয়তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ।
স্বাস্থ্য ॥ জেলার স্বাস্থ্যখাতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল নামে পরিচিতি জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতালটিকে ১শ’ শয্যা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২শ’ ৫০ শয্যার হাসপাতাল। এজন্য গণপূর্ত বিভাগ ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে নতুন ভবন। চালু করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। এছাড়াও খালিয়াজুরী ও বারহাট্টা ছাড়া বাকি ছয় উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১২ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা সদরের ইসলামপুর এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে চারতলাবিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতাল। এদিকে মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী এবং বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য কয়েকটি নতুন ভবন এবং সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়েছে একটি নৌ-এ্যাম্বুলেন্স। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে ২শ’ ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক- যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে প্রশংসিত।
আর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ॥ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দক্ষতা নির্ভর জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যেও নানা প্রয়াস চলছে নেত্রকোনায়। সদর উপজেলার বর্ণি এলাকার ৫শ’ একর জমিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫শ’ ৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের নবেম্বর মাসে ময়মনসিংহ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এদিকে কারিগরি দক্ষতা নির্ভর জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে রাজুরবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত মোটর ড্রাইভিং, কম্পিউটার অপারেশন, ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কস, গার্মেন্টস, আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি সাত ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জেলা শহরের পুরাতন জেলাখানার জায়গায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ছয় তলাবিশিষ্ট শেখ কামাল আইটি পার্ক। এ প্রকল্পটির নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও সাখুয়া এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন ॥ গত সরকারের আমলে নেত্রকোনা সদর-বারহাট্টা আসনের এমপি আরিফ খান জয় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী হন। তার উদ্যোগে ২০১৫ সালে জেলা শহরের সাতপাই এলাকায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ হাজার আসনবিশিষ্ট অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম। বর্তমান সরকারের আমলে একই আসনের এমপি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপির চেষ্টায় জেলা সদরে একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান (সাবেক সিনিয়র সচিব) সাজ্জাদুল হাসানের চেষ্টায় মোহনগঞ্জের বাহাম গ্রামে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ শৈলজারঞ্জন মজুমদারের পৈত্রিক বাড়িতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ২০ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। ২০১৮ সালের ২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পটিরও কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
হাওড়-বাঁওড় আর গারোপাহাড়ের অপার সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ জেলার পর্যটনশিল্পের বিকাশেও নেয়া হয়েছে বেশকিছু উদ্যোগ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় জানান, তাদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে পাহাড়ী জনপদ দুর্গাপুরের বিজয়পুরে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটন রেস্ট হাউজ (ডাকবাংলো)। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মদন উপজেলার উচিতপুর হাওড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে উচিতপুর পর্যটনকেন্দ্র। এদিকে মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আরও একটি হাওড়ভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র। মোহনগঞ্জের জৈনপুরে বাউলসাধক উকিলমুন্সির স্মৃতি রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে উকিল মুন্সি স্মৃতিকেন্দ্র। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দুয়ার রোয়াইলবাড়ি দুর্গের সৌন্দর্য বর্ধন, জেলা পরিষদের উদ্যোগে কলমাকান্দার নাজিরপুর এবং জেলা শহরের পাটপট্টি ও মোক্তারপাড়ায় মগড়া সেতুর পাড়ের বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি স্মৃতিসৌধ। জেলা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠ থেকে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত এলাকাটিকে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের আঙ্গিনায় বানানো হচ্ছে ‘চেতনার বাতিঘর’ নামে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, টেরাকোটাসহ দৃষ্টিনন্দন কিছু স্থাপত্য- যা বাড়াচ্ছে নান্দনিকতা।
সামাজিক নিরাপত্তা ॥ নেত্রকোনা সদর-বারহাট্টা আসন থেকে নির্বাচিত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুকে বর্তমান সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তার উদ্যোগে গত অর্থবছরে সদর ও বারহাট্টা এবং চলতি অর্থবছরে বাকি আটটি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়। এছাড়া ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা সদরের পারলা এলাকায় নির্মাণ করা হয় ছয় তলাবিশিষ্ট সমাজসেবা ভবন। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা ভাতা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৯শ’ ৫৮ জন দরিদ্র রোগীকে। বাড়ানো হয়েছে প্রতিবন্ধী, বেদে, অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠী এবং হিজড়াভাতাও। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর উদ্যোগে জমি বন্দোবস্তসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে ১০ উপজেলার ১ হাজার ৮শ’ ৮৫টি গৃহহীন পরিবারকে।
কৃষি ॥ কৃষিনির্ভর জেলা নেত্রকোনা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানকার কৃষি ক্ষেত্রেও এসেছে বেশকিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন। ২০১৭ সালের অকালবন্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে হাওড়ের বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মোহনগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে সিসি ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চর হাইজদা বাঁধ। পাশাপাশি ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিঙ্গাপোতা হাওড়ে খনন করা হচ্ছে ৫৪ দশমিক ২৩ কিলোমিটার খাল এবং নির্মাণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার হাওড়-রাস্তা।
স্থানীয় সরকার ॥ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও হয়েছে কাক্সিক্ষত কিছু উন্নয়ন। বিশেষ করে গত সরকারের আমলে (২০১৬ সালে) মোহনগঞ্জ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীতে ও দুর্গাপুর পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং বর্তমান সরকারের আমলে (২০১৮ সালে) কেন্দুয়া ও মদন পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। কয়েকটি মেগা প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সড়কগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সিসি ঢালাই দিয়ে। ড্রেনেজ ব্যবস্থারও করা হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। এদিকে মোহনগঞ্জ পৌরসভায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ২৯ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক পৌর শিশুপার্ক। সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে পৌরসভার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত শিয়ালজানি খালের। ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে নতুন ট্রাক স্ট্যান্ড।
অন্যান্য খাত ॥ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলার ১০ উপজেলার শতভাগ গ্রামে জ্বলছে পল্লী বিদ্যুতের বাতি। ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সরকারী বরাদ্দে নির্মাণ করা হয়েছে জেলা বার ভবন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণ করা হয়েছে জেলা প্রেসক্লাব ভবন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুর উপজেলায় চলছে পাহাড়ী নদী সোমেশ্বরীর ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ। এছাড়াও জেলায় গত একযুগে বাস্তবায়িত দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: জেলা শহরের কাইলাটি রোডে নির্মিত নতুন কারাগার, বনোয়াপাড়া এলাকায় কৃষি আবহাওয়া অফিস, ঋষিপাড়া এলাকায় পাসপোর্ট অফিস, রাজুরবাজারে ফলিত পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্র ও হাঁসের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন হোস্টেল, পাঁচ উপজেলায় নতুন খাদ্যগুদাম, সব উপজেলায় সার্ভার স্টেশন, মোহনগঞ্জের আদর্শনগর, পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ ও কেন্দুয়ার পেমুই এলাকায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন, পুলিশের বারহাট্টা সার্কেলের অফিস ভবন, সদরে পুলিশ ফাঁড়ির ভবন, বারহাট্টা থানা ভবন, জেলা সদরে এনএসআই ভবন, আনসার ব্যাটালিয়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ, দশ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মোহনগঞ্জে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রি ভবন, কলমাকান্দায় উপজেলা পরিষদ ভবন, মদন, দুর্গাপুর, কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলায় ফায়ারসার্ভিস স্টেশন প্রভৃতি। এছাড়াও দশ উপজেলায় মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।