নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি বন্যার্তদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ ও সিলেটে দলের ৯ এমপিকে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে সমকালকে বলেছেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বন্যাকবলিত মানুষকে দ্রুত উদ্ধার থেকে শুরু করে তাঁদের মধ্যে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়াসহ সার্বিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটর করছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবারের মতো শনিবারও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা, মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর নির্দেশনা পেয়ে শনিবার বন্যাদুর্গত এলাকায় গেছেন আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
তিনি অবশ্য সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় পৌঁছাতে পারেননি। কোনো ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় হবিগঞ্জে থেকেই তিনি উদ্ধার কার্যক্রমে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করছেন।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন; ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের চারদিকে পানি আর পানি। একই রকম অবস্থা সিলেটেও। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রথমেই পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে আটকে পড়া মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনছেন। তাঁদের চিড়া, গুড়, বনরুটি, বিস্কুটসহ শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তাঁরা শনিবার থেকেই ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে দুইবেলা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পানি নেমে যাওয়ার পর অসহায় পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এদিকে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি। এই বৈঠকে বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দুই জেলার আট উপজেলায় সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন এবং ছয়টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসছেন সেনা সদস্যরা। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা, স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত, খাদ্যসামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ৩০ লাখ করে মোট ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০০ টন চাল, ৮ হাজার করে শুকনো খাবারের (চাল, ডাল, তেল, চিনি ও মসলা) প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ ও শিশুদের উদ্ধারে নৌকা এবং ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনা খাবারসহ জীবন রক্ষাকারী অন্যান্য সামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।