নিউজ ডেস্ক:
ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত গত ২২ দিন দেশের নদ-নদীতে ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সুফলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে এ বছর ইলিশের বিচরণ তুলনামূলক বেড়েছে। জেলেরা বলছেন, এ বছর ইলিশের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে বেশি, আকারেও বড়। ব্রহ্মপুত্রে যে ইলিশ ধরা পড়ছে সেগুলোর বেশিরভাগই ইতোমধ্যে ডিমও ছেড়েছে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট বাজারে ইলিশ বিক্রি করতে আসা নুরনবী বলেন, ‘আইজ (শনিবার) সন্ধ্যায় ২৫ কেজি ইলিশ বেচছি। সবগুলারই সাইজ মোটামুটি বড়। ১৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন আছিল। কিন্তু মাছে ডিম আছিল না। এই কয়দিনে বেশিরভাগ মাছই ডিম ছাড়ছে।’
ইলিশের প্রাপ্তি নিয়ে এই মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, ‘গত কয়েকদিন নদীতে প্রশাসন আছিল। তখন নৌকা আছিল কম। অহন নদীতে সবাই নামছে। এতে মাছের পরিমাণ কমেছে, তয় ইলিশের সাইজ ভালো।’
‘গত বছরের চেয়ে এ বছর নদীতে ইলিশ বেশি। কিন্তু বেশিরভাগ ইলিশ উজানে (ভারতীয় জল সীমায়) চইলা গেছে,’ ব্রহ্মপুত্রে ইলিশের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন করলে এই কথা বলেন নুরনবী।
রবিবার সকালে কথা হয় একই উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের জেলে আছির উদ্দিনের সঙ্গে। তখনও তিনি ব্রহ্মপুত্রে ইলিশ শিকারে ব্যস্ত। আছির উদ্দিন বলেন, ‘ইলিশ পাওয়া যাইতাছে। গতকাইল থাকি নদীতে পানি একটু বাড়ছে। এজন্য মাছ একটু কম পাইছি। কিন্তু ইলিশ পাওয়া যাইতাছে।’
মৎস্য বিভাগ বলছে, শুধু নিষেধাজ্ঞার সময়ে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ ঘটে। মূলত ভাটিতে আহরণ বন্ধ থাকলে উজানে আসার সুযোগ পায় ইলিশ। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে আসতে ইলিশ মাছকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এই দীর্ঘ পথের মধ্যবর্তী নদ-নদীতে জাল কিংবা নাব্য সংকটে পরিব্রাজন বাধাগ্রস্ত হলে উজানে আসতে আরও বেশি সময় লাগে। এসব কারণে নিষেধাজ্ঞার প্রথম দুই সপ্তাহ ব্রহ্মপুত্রে ইলিশের বিচরণ কম থাকলেও শেষের কয়েকদিন নদে ইলিশ আসার পরিমাণ বেড়েছে।
মৎস্য বিভাগ আরও জানায়, এ বছর ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে কুড়িগ্রামের নদ নদীতে পরিচালিত অভিযানে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০ মিটার ইলিশ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব জালের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর জব্দ করা ইলিশের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি, ১২৭ কেজি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) কালিপদ রায় বলেন, ‘এ বছর ব্রহ্মপুত্রে ইলিশের বিচরণ তুলনামূলক বেড়েছে। গত ২২ দিনের অভিযানে আমরা যেসব ইলিশ জব্দ করেছি সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল পুরুষ ইলিশ। আর যে কয়েকটি স্ত্রী ইলিশ পাওয়া গেছে সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল ডিম ছেড়ে দেওয়া।’
‘তবে এমনও ইলিশ পাওয়া গেছে যেগুলো এখনও ডিম ছাড়েনি। স্ত্রী ইলিশ এই ২২ দিনের আগে পরেও ডিম ছাড়তে পারে। তবে গবেষণা বলছে, এই ২২ দিন ডিম ছাড়ার প্রধান সময়। তার মানে বেশিরভাগ মা ইলিশ এই সময়ে ডিম ছাড়ে,’ যোগ করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।