সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / নির্বাচনী প্রচারণার জোড়দার নৌকা; ঢিমেতালে বিএনপি

নির্বাচনী প্রচারণার জোড়দার নৌকা; ঢিমেতালে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর:
জাতীয় সংসদের উপ নির্বাচন নওগাঁ-৬ আত্রাই-রাণীনগরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল ও বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু তারা দুইজনই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের মাঠে প্রচার প্রচারনা চালালেও এগিয়ে আছে নৌকা প্রতীকের প্রচারণা। বৃষ্টি-বাদলকে উপেক্ষা করে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও নেতা কর্মীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী ছাড়াও নিজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) নির্বাচনী এলাকা।

গত প্রয় ১২বছরের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে এবং চলমান উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থী ও সমর্থক নেতা-কর্মীদের চলছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা। আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমি ঘুরে এবং তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচার চলছে জোরেশোরে। গ্রামে-গঞ্জে পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে দেখা মিলছে নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতি ও ঝুলছে সাদা-কালো পোস্টার। কিন্তু আত্রাইয়ে ধানের শীষের পোস্টার ঝুলতে চোখে পড়লেও রাণীনগরে তা পড়ছে না। অভিযোগ উঠছে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর মতো মাঠে নামতে পারছে না।

তারা বলছে, আমাদের শান্তিপূর্ণ সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও নির্বাচনী প্রচারনায় হুমকী-ধামকীসহ নানা কায়দায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠ পর্যায় নির্বাচনী প্রচারনার প্রাণ খুলে করতে পারছে না। ইতি মধ্যে বিএনপি সংবাদ সম্মেলনসহ জেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তাদের নিরবতার কারণে নির্বাচনী মাঠে কার্যকর কোন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। বরং নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দায়সারা মনোভাব চোখে পড়ছে বলে বিএনপি প্রার্থী দাবি করছে।

দ্বিতীয় দফা বন্যা আর ঘূর্ণীঝড়ের কারণে বিশেষ করে আত্রাই উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণা কিছুটা ভাটা পড়ে। প্রার্থীরা আশা করছেন বন্যার পানি নেমে গেলে রাস্তাঘাট ভালো হলেই মাঠ পর্যায় প্রচারণা আরো উৎসবমূখর হবে। তবে বিএনপির শিবিরে আতংক আর অস্থিরতার ভাব লক্ষ করা গেছে। তারা প্রচারণা করতে গিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের জামালগঞ্জ মোড়ে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর বাজারে হামলার শিকার হন। এসব প্রতিকার চেয়ে বিএনপির প্রার্থী থানায় জানালে পুলিশ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিতে বলেন। ফলে দুই সংস্থার টানাটানিতে নির্বাচনের মাঠ আরো অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণায় ও এগিয়ে আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নানা ধরণের প্রচারণা। বিপরীতে বিএনপির ডিজিটাল প্রচারণা খুব কম। অবশ্য বিএনপির অভিযোগ ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার কিছু সাইড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রচারে এগিয়ে থাকার ব্যাপারে মিরাট ইউনিয়নের আওয়ামী-যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত প্রায় ১২বছরে আত্রাই-রাণীনগরে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যেভাবে সাফল্য এসেছে তার কারণে আবারোও নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রচার কার্যক্রমে।

বড়গাছা বাজারে কথা হয় গিরিগ্রামের আরিফ হোসেন, লক্ষীকোলা গ্রামের শুভ ও আব্দুল মতিনের সঙ্গে। তারা বলেন এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা আমাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিবো। আবাদপুকুর বাজার হয়ে একডালা ইউনিয়নের নগর পাঁচুপুর, বড়বড়িয়া, বনমালিকুড়ি এলাকা ঘুরে কথা হয় স্থল গ্রামের নজরুল ইসলাম আব্দুল খালেক ও মুদির দোকানী আলাউদ্দিনের সঙ্গে।

তারা বলেন, এক সময় আমাদের এই এলাকা খুব অশান্ত ছিলো। কখনো সর্বহারা কখনো জেএমবি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকা এখন শান্তি ফিরে এসেছে। এখানে আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতা কর্মীদের কোনো দ্বন্দ নেই। সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও উন্নয়নের প্রতীককে প্রধান্য দিয়ে ভোটাররা ভোট দিবেন।

কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আবুল কালম আজাদ বলেন, কাশিমপুর ইউনিয়নের কোথাও আমরা পোস্টার ঝুলাতে পারিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা আপনারা কেন্দ্রে যাবেন না। বিএনপির কোন ভোটার যেন কেন্দ্রে না যায়। ভোট দিতে গেলে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া হবে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকী দেওয়া হচ্ছে।

হরিশপুর গ্রামের তরুন দুই ভোটার আব্দুল বারিক ও শাকিল বলেন, স্বাধীনতার পক্ষে এলাকায় যারা উন্নয়নে কাজ করবে এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করবে, তারা তাদের ভোট দেবেন। দু’জনই এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানান।

কথা হয় কয়েক জন খেটে খাওয়া পুরুষের সঙ্গে। কুজাইল বাজার বয়লার চাতালের পুরুষ শ্রমিক আশরাফুল, রহিদুল ও আব্দুস ছাত্তার বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক আর বিএনপি ক্ষমতায় আসুক তাঁদের চাতালেই কাজ করতে হবে। তবে তাঁরা ভোট দিতে যাবেন এবং পছন্দের মার্কায় ভোট দেবেন।

আত্রাই মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক দুলু বলেন, গত প্রায় ১২ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যারা আত্রাই রাণীনগর সন্ত্রাসী জনপদ থেকে উন্নয়নের জনপদে পরিণত করেছে ভোটাররা এমন ব্যাক্তিকেই ভোট দিবেন। তবে ভোট নিরোপেক্ষ হওয়ার দরকার।

ধানের শীষের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম রেজু বলেন, নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। ধানের শীষের প্রার্থীর মাঠ পর্যায়ে পোস্টার পর্যন্ত সাঁটাতে দেওয়া হচ্ছে না। হুমকী দেওয়া হচ্ছে আমাদের নেতা কর্মীদের। অজানা আতংকের কারণে বিএনপির নেতা কর্মীরা কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করছে। এভাবে অবাধ, নিরোপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না। প্রশাসন যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারে আগামী ১৭ অক্টোবর ধানের শীষের বিজয় ইনশাল্লাহ্ হবেই।

অপর দিকে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। আমার কোনো নেতাকর্মী বিএনপির প্রচারণায় বাধা দেয়নি। বরং তাদের অভ্যান্তরীন বিভেদ আর সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে তারা মাঠে নামছে না। আমি যেভাবে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি সেখানে আমার মনে হয়েছে ভোটাররা আমাকে ১৭ অক্টোবর উপ নির্বাচনে স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। কেননা জনগণ জানে এলাকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দেওয়া উচিত। বিশেষ করে এই জনপদ এক সময় ছিলো সন্ত্রাস ও রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে এক যুগের মধ্যেই আত্রাই রাণীনগর এখন উন্নয়ন আর শান্তিতে জনপদে পরিণত হয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে সর্বস্তরের জনগনের নিরাপত্তার জন্য কোন দল বা গোষ্ঠির সঙ্গে আপোষ করবো না।

ন্যাশনাল পিপুলস্ পার্টির আম মার্কা প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার ইন্তেখাব আলমের প্রার্থীতা কাগজে কলমে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা তেমন চোখে পড়ছেনা। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৬ হাজার ৭২৫জন। এর মধ্যে রাণীনগর উপজেলায় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৮৭ ও আত্রাই উপজেলায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৩৮ জন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলালের বাড়ি রাণীনগর এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শেখ মোঃ রেজাউল ইসলাম রেজুর বাড়ি আত্রাই উপজেলায় হওয়ায় দুই প্রার্থীই নিজ নিজ এলাকায় আঞ্চলিকতার মনোভাব নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বেশি সময় দিচ্ছে। এবং তাদের আশা স্ব স্ব এলাকার ভোটাররা আঞ্চলিকতাকে প্রধান্য দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিজয়ী চিত্র পাল্টাতেও পারে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম বলেন, এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। এখনও পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …