নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকায় সরকারি সম্পত্তি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই স্থানটি দখলমুক্ত করে লাল নিশানা টানিয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লাল নিশানা তুলে ফেলেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বেশ জল্পনাকল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিস ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামে ৩৪০ একর আয়তনের একটি সরকারি দিঘী রয়েছে। দিঘীটির জলার আয়তন ১১০ একর এবং পাড়ের পরিমাণ ২৩০ একর। সম্প্রতি ওই দিঘীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৪০ শতক জমি টিন দিয়ে ঘিরে মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন এবং সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। পাড়ইল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হকের যোগসাজশে মতিউর রহমান ওই জায়গা দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মোজাম্মেল হক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা দখলের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
গত ১৫-১৬ দিন আগে দখল করা জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করলে স্থানীয় লোকজন উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে গত ৮ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা সরকার সরেজমিনে গিয়ে দখলদার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সরকারি সম্পত্তি হিসেবে দখল করা স্থানে লাল নিশানা টানিয়ে আসেন। কিন্তু এর দুই দিন পর গত ১০ নভেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও জয়া মারীয়া পেরেরা লাশ নিশানা তুলে ফেলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিঘীরপাড় গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, বসতবাড়ির পাশে হওয়ায় সরকারি ওই সম্পত্তি গত ২০-৩০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছিলেন স্থানীয় সাহারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি। হঠাৎ করে গত ১৫-১৬ দিন আগে টিনের বেড়া দিয়ে ওই জায়গা দখল করে নেন মতিউর রহমান। গ্রামের প্রায় সব লোক এতদিন ওই জায়গাটি খাস সম্পত্তি বলেই জানতো। হঠাৎ করে সেই জায়গা দখল করায় স্থানীয় লোকজন বিস্মিত হয়েছেন। পরবর্তীতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে লাশ নিশানা দিয়ে দখলমুক্ত করা এবং পরে নিশানার তুলে নেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় মাঝে জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করেছে।
মতিউর রহমান বলেন, ‘গাজী সালাউদ্দিন ওরফে পলাশ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে আমি ওই জায়গাটি কিনে নিয়েছি। সরকারি ওই জায়গাটি তাঁর ১০০ বছরের জন্য বন্ধকী নেওয়া রয়েছে। শুধু আমি নই এই গ্রামের আরও অন্তত ৬০টি পরিবার দিঘীর পাড়ের সরকারি সম্পত্তি দখল করে বাড়ি করে রয়েছেন। তাঁদের কোনো কাগজপত্রই নেই। আমার তো তাও কাগজপত্র রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এসিল্যান্ড যখন তদন্তে যান তখন ওই দখলদার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র না দেখাতে না পারায় এসিল্যান্ড সেখানে লাশ নিশানা টানিয়ে দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু পরে ওই দখলদার দাবি করেন ওই জিমিটি তিনি বন্ধকী নেওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন এবং নিজেকে ভূমিহীন হিসেবে দাবি করছেন। কাগজ দেখানোর পর সেখান থেকে লাল নিশানা তুলে ফেলা হয়। ওই জমিটি নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হওয়ায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। বন্ধকের কাগজ ভুয়া প্রমাণ হলে এবং দখলদার ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন না হলে সেই জমি উদ্ধার করা হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিঘীরপাড় গ্রামের ছয়-সাতজন লোক জানান, তাঁদের গ্রামের সরকারি ওই দিঘীর পাড়ের পরিমাণ প্রায় ২৩০ একর। ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ওরফে মোজা কালুর নেতৃত্বে সম্প্রতি এলাকায় একটি দখলদার শ্রেণি তৈরি হয়েছে। সরকারি সম্পত্তির ভুয়া বন্ধকী কাগজ তৈরি করে ওই শ্রেণিটি মানুষের কাছে ৫-৬ লাখ টাকা বিঘার জমি ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। গাজী সালাউদ্দিন যে ব্যক্তি বন্ধকী নিয়েছেন বলে দাবি করে মতিউর রহমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দখল বুঝে দিয়েছে, সেই ব্যক্তি কোনো দিনই ওই জায়গাটির দখলে ছিলেন না। প্রকৃত বন্ধকী কাগজ থাকলে এতোদিন অবশ্যই তিনি তা ভোগদখল করতেন। ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও সালাউদ্দিন যোগসাজশ করে মতিউরকে ওই জায়গার দখল বুঝে দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক দাবি করেন, ‘ওই জমি দখলের বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচেছ তা ভিত্তিহীন।’