নিউজ ডেস্ক:
নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল তাদের শর্তাবলি প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই তথ্য পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নতুন দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগামী জুনের মধ্যে শেষ করবে নির্বাচন কমিশন।
রোডম্যাপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কমিশনের ভূমিকা একক নয়। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সমর্থক, ভোটার, মিডিয়া, নাগরিক সমাজ এবং পর্যবেক্ষকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জগুলোও উল্লেখ করা হয়।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা সৃষ্টি, প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন, অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ, সব দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি অনুসরণ, নিয়মতান্ত্রিক প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, পুলিশ ও প্রশাসন কর্তৃক বাধার সম্মুখীন না হওয়া এবং ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী, এজেন্ট ও ভোটারদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা।
রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তারা জানান, খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে তা পৌঁছানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছে, আর যারা বিপক্ষে বলেছে, তাদের সবার নাম রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কী কী, তা মোকাবিলায় করণীয় কী, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
রোডম্যাপে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো কখন শেষ করা হবে এবং ইসির কোন শাখা তা বাস্তবায়ন করবে, এর সময়সূচি উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসির পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। শুধু মেট্রোপলিটন ও জেলা সদর আসনগুলোয় এ মেশিনে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ দেওয়া হবে।
নির্বাচনের আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক তাৎক্ষণিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরপিও এবং আচরণবিধিতে সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে (ইতোমধ্যে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে)। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যতদূর সম্ভব রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া প্রার্থীদের জনসভা করার স্থান, তারিখ ও সময় শিডিউল করে দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের বিষয়ে রোডম্যাপে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর আলোকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখার জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুনে। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে নতুন দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি।
আইন সংশোধনের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে আইন সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত করা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন সংস্কার কাজ শেষ করা হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের খসড়া তালিকা তৈরি করা হবে মার্চে। ওই তালিকার ওপর এপ্রিলে দাবি আপত্তি ও সুপারিশ আহ্বান করা হবে।
মে মাসে শুনানি শেষে জুনে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে। চলমান ভোটার তালিকা আগামী ২ মার্চ প্রকাশ করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তিনশ সংসদীয় আসনের ভোটার তালিকার সিডি বিতরণ করা হবে। নির্বাচনে প্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত সফটওয়্যার আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে শেষ করা হবে। এছাড়া জুলাইয়ে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ওই কেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হবে। খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি ও আপত্তি থাকলে আগস্টে তা গ্রহণ করবে কমিশন। ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে।