নিউজ ডেস্ক:
একটি সোলার পার্কের নামকরণ নিজের নামে করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি এই নামকরণের বিরোধিতা করেন। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গণভবন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠক পর্যন্ত এর নাম ছিল শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ, জামালপুর। প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণে ঘোরতর আপত্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে তার নাম থাকবে না। কমিটির সদস্যরা তার নামে নামকরণে একাধিকবার অনুরোধ করেন। নামকরণের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আগেই অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়। সবাই বলেছেন, দেশের সব থেকে বড় সোলার পার্ক এটি, একটি আইকনিক প্রকল্প; এতে আপনার নাম থাকা উচিত। এ জন্য উনাকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু জবাবে তিনি বলেছেন, হবে না, হবে না, হবে না। পরে উনার জোর আপত্তির পর শেখ হাসিনা অংশটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় ‘সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ জামালপুর’। এই নামটির প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রী করেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সোলার পার্ক স্থাপনে প্রচুর জমির প্রয়োজন। এই প্রকল্পে সাড়ে তিনশ একরের বেশি জমি দরকার হবে। এসব বিবেচনায় এ ধরনের প্রকল্পের যৌক্তিকতা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান বলেন, ‘সোলার পার্ক স্থাপনে অনেক জমি প্রয়োজন হয়, এটা অস্বীকার করছি না। তবে, এই পুরো জমিটাই খাস এবং অনাবাদি। এখানে কোনো চাষাবাদ হয় না। আর সোলার প্যানেল স্থাপনের পরে জমি অন্য কোনো কাজে লাগানো হবে কিনা এ বিষয়ে কোনো চিন্তা করা হয়নি। ভবিষ্যতে হলে তা জানানো হবে। অবশ্য এ সোলার পার্কটি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়ায় স্থাপনের প্রস্তাব হলেও ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে তা নাকচ হয়ে যায়।
৮ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩৭ কোটি ৯ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ১ হাজার ১৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে এতে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন (রংপুর জোন)’ প্রকল্প। একই মন্ত্রণালয়ের ‘বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন, এলজিইডি অংশ)’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদে ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ১৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরে মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প, যা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।