নিউজ ডেস্ক:
নিজস্ব জমি ছাড়া ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগে নির্ধারিত জমিতে ভাড়া বাসার চুক্তিপত্র দেখানোর শর্তে অনুমোদন দেওয়া হলেও বর্তমানে সেই শর্তকেও বাতিল করা হয়েছে। ফলে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে নির্ধারিত জমির কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।
এ ছাড়া আগে অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব জমিতে যাওয়ার জন্য দুই বছর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।
অন্যথায় এসব প্রতিষ্ঠানেরও পাঠদানের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২২’ এ নির্ধারিত জমির এই শর্ত আরোপ করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর এই নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। সেই নীতিমালা প্রয়োগ শুরু করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
গতকাল রবিবার এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে যেসব প্রতিষ্ঠান জমি ছাড়াই বিদ্যালয় স্থাপন করেছে, এখনো নিজস্ব জমিতে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থানান্তর করেনি, তারা যেকোনো কাজে বোর্ডে এলে আমরা তাদের কাজ বন্ধ করে দুই বছরের সময়সীমা দিয়ে নিজস্ব জমিতে ভবনে যেতে বাধ্য করব। যারা এ কাজ করতে ব্যর্থ হবে তাদের পাঠদান অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের নামে জমি না থাকলে নতুন করে বিদ্যালয় খোলার অনুমোদনও দেওয়া হবে না। আগে ভাড়া বাড়িতে বিদ্যালয় খোলার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না।
বিদ্যালয়ের নিজস্ব নামে জমি থাকতে হবে, সেখানে বিদ্যালয়ের স্থাপনা থাকা বাধ্যতামূলক।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানের প্রায় ৯৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে অনেক স্কুল-কলেজ। ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিগত দুই বছরের এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এসএসসি পরীক্ষায় ২০২১ সালে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৫০টি হয়েছে। একইভাবে এইচএসসিতে ২০২১ সালে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি থেকে ১০ গুণ বেড়ে ২০২২ সালে ৫০টি হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৯৬.৬৪ শতাংশ স্কুল-কলেজ (মাদরাসা ও কারিগরি ব্যতীত) বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ২০২১ সালে নিবন্ধিত ২৩ হাজার ৭৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৮০০টি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ৯৭৮টি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যত্রতত্র স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠার কারণে হয়তো বেকারত্ব কমছে, কিন্তু মানসম্মত শিক্ষকসহ পাঠদান নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার মানোন্নয়ন কখনো সম্ভব না। শুধু নীতিমালা করলেই হবে না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন নীতিমালা অনুসরণ করে, কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি পেতে নিজস্ব জমির সঙ্গে জনসংখ্যার বিপরীতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপনের শর্ত মানতে হবে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও আনুষঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যালয়ের পাঠদান অনুমতি পেতে এসব বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে যেসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করার সুযোগ নেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি থাকবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোতে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এক বছরের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেখাতে ব্যর্থ হলে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান অনুমতিও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।