একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়, মামলার নথিসহ যাবতীয় দলিলপত্র সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজস্ব আর্কাইভ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণে এ আর্কাইভ স্থাপন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারের রায়সহ কাগজপত্র সংরক্ষণে ট্রাইব্যুনালে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বিচার-সংশ্নিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য স্থায়ী স্থাপনা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে আর্কাইভ স্থাপনের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনসংলগ্ন অস্থায়ী ভবনে প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভা হয়েছে। সভায় বলা হয়, বিচারের রায়সহ নথি প্রয়োজন হয়। তাই স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনে আর্কাইভ স্থাপন করা প্রয়োজন। এ জন্য আইন ও বিচার বিভাগ একটি কমিটি গঠন করতে পারে। পাশাপাশি আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও স্থায়ীভাবে মূল ভবনে এ আর্কাইভ স্থাপনের জন্য বর্তমান টিনশেডের অস্থায়ী ভবনে প্রাথমিক কাজ শুরু করা যেতে পারে।
গত ১৭ জানুয়ারি সভায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, দুই সদস্য বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম, রেজিস্ট্রার মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) শেখ গোলাম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুই দফায় ২০২২ ও ২০১৮ সালে শীর্ষ সাত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে স্বউদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা হলেন- গোলাম আযম (স্বাভাবিক মৃত্যু), ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুল কাদের মোল্লা এবং পলাতক চৌধুরী মঈনউদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান।
ট্রাইব্যুনাল-সংশ্নিষ্টরা জানান, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের চূড়ান্ত রায়, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, জব্দ তালিকা, দালিলিক প্রমাণপত্র, ফরমাল চার্জ, সাক্ষীদের জবানবন্দি, কেস ডায়েরি, ডিপোজিশনসহ সব তথ্য আর্কাইভে জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের রায়, রিভিউ রায় ও দ কার্যকরে সরকারের আদেশসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আর্কাইভে পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণ করা হবে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, গত ১২ বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫০টি মামলার রায় হয়েছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটা ভালো উদ্যোগ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ইতিহাস যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে, সে জন্যই এসব মামলার নথি আর্কাইভে সংরক্ষণ করা উচিত।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ও বিচারের রায় দ্রুত সংরক্ষণ না করা হলে ভবিষ্যতে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ ও তাদের সহযোগীরা বিচারের তথ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করতে পারে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে গবেষণাকর্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ সবার দায়িত্ব।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আর্কাইভ স্থাপন করা হবে।