নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর প্রতিনিধি. নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস এমপি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় বুধবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৭ বছর। আব্দুল কুদ্দুসের পৈতৃক বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত বিলসা গ্রামে। তিনি মৃত হায়েতুল্লাহ সরদারের ছেলে। তার ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস জানান, তার পিতা দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাই নিয়মিত থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সম্প্রতি দেশে ফিরে আগস্ট মাসজুড়ে প্রতিদিনই একাধিক কর্মসুচীতে অংশ নিয়ে শারিরীকভাবে ক্লান্ত ছিলেন তিনি। গত শনিবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় হঠাৎ আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৯১ সাল থেকে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন হয়েছে সকল নির্বাচনেই তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচবারের মতো বিজয় লাভ করেন। এছাড়া সপ্তম সংসদে তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
প্রবীণ ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে রাজশাহীতে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন। পরবর্তীতে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি (১৯৬৮-১৯৭২) পর্যন্ত বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পরে (১৯৭২-১৯৭৪) রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পর তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী রাজশাহীতে প্রথম আব্দুল কুদ্দুসকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। সেখানে দীর্ঘ ৫ বছর কারাভোগ করেন তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে (১৯৮২-১৯৮৬) পর্যন্ত রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী মহানগর গঠিত হলে (১৯৮৬-১৯৯০) পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সামরিক শাসকের অবসানের পর (১৯৯১) সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রায় ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানলেন বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা। তার মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোক বিরাজ করছে।