নিজস্ব প্রতিবেদক:
লালপুর উপজেলা সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে নৌকার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকা প্রতিকের পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল।
লালপুর উপজেলার চংধুপইল, আড়বাব ও ওয়ালিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী পক্ষে ‘ভোট কেটে’ নৌকাকে পরাজিত করেছেন দাবী করে ভোট পুনঃগণনার চেয়েছেন শহিদুল ইসলাম বকুল। আজ বৃহস্পতিবার(১১ জানুয়ারি) দুপুরে বাগাতিপাড়ার স্যান্নালপাড়ায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল।
এসময় তার সাথে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইউনুস আলী, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জয়, বাগাতিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল। সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম বকুল অভিযোগ বলেন, ‘৭ জানুয়ারি সকালে আমার নিজ এলাকা বাগাতিপাড়া কেন্দ্রে ভোট দিই।এসময় জানতে পারি লালপুরের চংধুপইল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রেজাউল করিমসহ তার লোকজন ঈগলের পক্ষে ভোট কেটে নিচ্ছে।তখন ওই ইউনিয়নে যাই ও বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখি আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।আমি অভিযোগ জানালে রেজাউলকে আটক করা হয়।এরপর অন্য ইউনিয়নগুলোতে গিয়ে দেখি নৌকার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।আমি তাদের পুনরায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করাই।আমি এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে গেলে আগের কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের থেকে সাক্ষর নেয়া হয়।তাদের বলা হয় যে গননার সময় তাদের সামনেই গণনা করা হবে।কিন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে চেয়ারম্যান রেজাউলকে ছেড়ে দেয়া হয়।এরপর প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই আমার এজেন্টদের গণনার সময় বের করে দেয় প্রিজাইডিং অফিসাররা।
ব্যালটের বান্ডেল চেক করে দেখতে দেয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত লালপুরের নেংগপাড়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের নৌকার পোলিং এজেন্ট হামিদা খাতুন বলেন, ‘আমি নৌকার এজেন্ট বলে ভোটগ্রহন শেষে আমাকে প্রিজাইডিং অফিসার ডেকে সাদা ফরমে স্বাক্ষর দিতে বলেন।আমি স্বাক্ষর দিলে ঈগল মার্কার ৫টি ও নৌকার ৪টি ব্যালট বান্ডেল রাখেন।আমি ব্যালট উল্টে দেখতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন ভোট গণনা হয়ে গেছে।রাত ৮টার মধ্যে রেজাল্ট দিতে হবে তাই আপনাকে এখন দেখানোর সময় নাই।’ কলসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৌকার এজেন্ট শাহ আলম বলেন, ‘প্রিজাইডিং অফিসার সকাল ১০টায় সবকিছু ঠিক আছে বলে আমাকে আশ্বস্ত করে স্বাক্ষর নেন।তিনি গণনার সময় আমাকে ব্যালটের সিল দেখতে দেবেন বললেও গণনার সময় বলেন তাদের লোক আছে তারা গণনা করবে।এই বলে আমাকে চলে যেতে বলেন।’
ফুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নৌকার এজেন্ট সাইম হোসেন বলেন, ‘আমি নামাজের জন্য দেড়টায় বের হই যখন তখন ১০৪টি ভোট কাস্ট হয়।১৫ মিনিট পর এসে দেখি ভোট বেড়ে হয়েছে ১৮৪।লাঙ্গলের এজেন্টকে পান কেনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে ঈগলের লোকজন জাল ভোট দিয়েছে। পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আদেশে নতুন ইউএনও যোগ দিয়ে পূর্বের প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা তৈরি করে।এ তালিকায় লালপুরের বাইরে থেকে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়।নতুন এ তালিকা ইউএনও আমাদের দেয়নি।এসব প্রিজাইডিং অফিসাররা শুধু নৌকার বিরুদ্ধেই না, সুষ্ঠু ভোটের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।
প্রশাসনের যোগসাজশ ছাড়া কেনভাবেই তারা এ মিশন সম্পন্ন করতে পারতেন না।তাই ভোট পুন:গননার লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে লালপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।অভিযোগ যে কেউ দিতেই পারে, তবে তা দেখবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’ উল্লেখ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কাছে ১৯০০ ভোটে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল।