নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নাটোরসহ সারাদেশে চলছে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান কার্যক্রম। জনসাধারণকে এই টিকা গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস এবং এর অধীন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত সকলে। আর এই কার্যক্রমের নেতৃত্বে রয়েছেন নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবুর রহমান। টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় থেকেই মাইকিংসহ চলমান এই নিবন্ধন কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে।
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের সূচনা করেন ডাঃ মাহবুব। এই দপ্তরে তাঁর চালু করা বিনামূল্যের প্যাথলজি ল্যাব স্থাপন এবং ফল ও ফুল বাগান ইতোমধ্যে সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে জেলার একমাত্র কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে এই দপ্তরেই। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ঐ সময়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষাগারে প্রেরণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ডাঃ মাহবুব প্রকৃতই করোনাযোদ্ধা। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে তৎপর হয়ে ওঠেন তিনি। নাটোর শহরসহ নাটোর সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলায় টিকা গ্রহনে জনসাধারণকে উদ্ধুদ্ধ করতে শুরু করেন মাইকিং, সাথে বিনামূল্যে অনলাইন নিবন্ধনের ঘোষণা। ডাঃ মাহবুব নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বেও নিয়োজিত আছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহনের জন্যে জেলায় এ পর্যন্ত অনলাইন নিবন্ধন করেছেন ৫৬ হাজার ১৮ জন ব্যক্তি। এরমধ্যে ১৭ হাজার ৪৭২ জন ব্যক্তির নিবন্ধন সম্পন্ন করে সর্বাধিক নিবন্ধন নাটোর সদর উপজেলার।
ধারণা করা হচ্ছে, নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের মাইকিং এবং বিনামূল্যে অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম সর্বাধিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসে দাপ্তরিক সময়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন পরিসংখ্যানবিদ মঞ্জুয়ারা বেগম এবং হিসাবরক্ষক রেহানা খাতুন। সময়ে সময়ে এই কাজের সহযাত্রী হয়ে ওঠেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবুর রহমান এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুকন্যা সরকার।
এই দপ্তরে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ ব্যক্তি কোভিড-১৯ টিকা গ্রহনের অনলাইন নিবন্ধন কাজ সমাধা করেছেন। নিবন্ধন করতে এসে কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা রুপা বলেন, খুব অল্প সময়ে অনায়াসে নিবন্ধন করতে পারলাম, আমার হাতে এখন বিনামূল্যে পাওয়া নিবন্ধনের প্রিন্ট আউট কপি। এই দপ্তরে বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন।
তিনি জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাবলিক কম্পিউটার সার্ভিস বুথগুলো ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা করে নিচ্ছে। করোনাযোদ্ধা ডাঃ মাহবুবের নেতৃত্বে এই উদ্যোগে হাজারো মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
এই দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ মঞ্জুয়ারা বেগম জানান, দাপ্তরিক কাজের মধ্যেই যে কোন ব্যক্তি আসলে নিবন্ধন করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমি দুই শতাধিক ব্যক্তির নিবন্ধন করে দিয়েছি। ‘অনেক সময় ব্যস্ততা কম থাকলে নিবন্ধন কাজ করে দেন ডাঃ মাহবুব স্যার আর ডাঃ সুকন্যা ম্যাডাম’ বলে জানালেন হিসাবরক্ষক রেহানা খাতুন।
নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ১৩১ জনের নিবন্ধন করে দিয়েছি’।
নাটোর সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলার ৪৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায় ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী এবং সাব এসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারবৃন্দ অনলাইন টিকা গ্রহনের কাজে নিয়োজিত আছেন।
নাটোর সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দাদের টিকা কেন্দ্র হিসেবে নাটোর সদর হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কেন্দ্রের টিকা প্রদানের হার জেলার মধ্যে সর্বাধিক। সর্বাধিক টিকা প্রদান কেন্দ্র হওয়ার কারন হিসেবে বিনামূল্যে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার সুফল বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাটোরের সিংড়া উপজেলা, এমনকি রাজশাহী থেকে টিকা এনে টিকার চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রেখেছেন ডাঃ মাহবুব।
মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুকন্যা সরকার জানান, যে কোন উদ্যোগ সফল করতে দলগত চেষ্টা থাকা প্রয়োজন। ডাঃ মাহবুব দপ্তরের অধীন সকলকে একই লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করে দলগত প্রচষ্টার মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সকল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মানুষের সেবা প্রাপ্তির পরিধি বাড়াতে পারলে সরকারের লক্ষ্য অর্জন তরান্বিত হবে, আমার চাকুরী সার্থক হবে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফল করতে ডাঃ মাহবুব নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। টিকা প্রদান কার্যক্রমে ডাঃ মাহবুবের নেতৃত্বে তাঁর দপ্তরের বিনামূল্যে অনলাইন নিবন্ধন সেবা প্রদানের ফলে উপকৃত হচ্ছেন এই এলাকার মানুষ। সকলের সম্মিলীত প্রচেষ্টায় সরকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে।