শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জনদুর্ভোগ / নাটোরে সড়কজুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে!

নাটোরে সড়কজুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে!


নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ধীরগতির কারণে যানজট, ধীরগতি ও সড়কজুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান এই উন্নয়ন কাজই এখন চরম ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে নাটোরবাসীকে। এ কারণে প্রধান সড়কে লেগে থাকছে যানজট। অন্যদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রের সব সড়কের ফুটপাত এখন হকার, হোটেল মালিক এবং ভবন মালিকদের দখলে চলে গেছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত বাদ দিয়ে সড়ক ধরেই চলতে হচ্ছে পথচারীদের। নির্ধারিত সময়ের তিন বছর পরও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এই প্রকল্প নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে ।

জানা যায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে নাটোরের একটি জনসভায় শহরের প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। একনেক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নাটোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় জানায়, নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের পূর্ব বাইপাস থেকে পশ্চিম বাইপাস পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক ৪৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। ৪৮ ফুটের মধ্যে উভয় পাশে ৪ ফুট প্রশস্ত করে নালা (ড্রেন) হবে। নালার ওপরের অংশ পথচারী রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সড়কের মধ্যে চার ফুট প্রশস্ত বিভাজক (ডিভাইডার) প্রাচীর থাকবে। যার মধ্যে শোভাবর্ধনকারী গাছপালা রোপণ করা হবে। পাশাপাশি শহরকে আলোকিত করতে সোডিয়াম বাতি লাগানো হবে। সড়ক বিভাজকের উভয় পাশে যান চলাচলের জন্য ১৮ ফুট করে পিচ কার্পেটিং সড়ক থাকবে। এর প্রতিটি অংশ নয় ফুট প্রশস্ত করে দুটি করে লেন করা হবে। ফলে উভয় পাশ মিলে চারটি লেন হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ প্রথমে জোরেশোরে শুরু হলেও মাঝপথে এসে স্থবির হয়ে পড়ে। প্রশস্তকরণ করতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবনের অংশবিশেষ সড়কের মধ্যে পড়ে যায়। এসব স্থাপনা অপসারণে ভবন মালিকদের গড়িমসি ও সড়ক বিভাগের অবহেলায় কাজের গতি কমে আসে। সব মিলিয়ে ৫৪ দশমিক ৬৭ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ জন্য ৭১ জন ভূমিমালিক ও ৩১ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। ক্ষতিপূরণের জন্য ভূমির মূল্য বাবদ ২ কোটি ৮৫ লাখ ও ব্যবসায়িক ক্ষতি বাবদ ২০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা প্রয়োজন পড়ে। প্রকল্প
প্রস্তাবে এই টাকা বরাদ্দ না থাকায় নতুন করে মন্ত্রণালয়ে টাকার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। দীর্ঘদিনেও এ টাকার জোগান দিতে পারেনি সড়ক বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কেস (এল/এ ৮/১৯-২০) নিস্পত্তি না হওয়ায় ভূমিমালিকদের মধ্যে নয়জন জনৈক রুহুল আমীনকে আমমোক্তার নিয়োগ করে ভূমি অধিগ্রহণ মামলাটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন (৮১৫১/২১) করেন।

রিটে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও নাটোরের জেলা প্রশাসকসহ সাতজনকে প্রতিপক্ষ করা হয়। প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট প্রতিপক্ষদের কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো হলেও আজ অবধি রিটটি নিস্পত্তি হয়নি। এদিকে নাটোর জজ আদালতেও ভূমিমালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় জেলা প্রশাসনকে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়। এ মামলাগুলো এখনো নিস্পত্তি হয়নি। এসব মামলায় উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ রাখার নির্দেশনা না থাকলেও প্রশাসন ও সড়ক বিভাগ উন্নয়নকাজ চালিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয়নি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে শহরের প্রধান সড়ক সম্প্রসারণের কাজ।

আমরা নাটোরবাসী সংগঠনের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তার মধ্যে এলোপাতাড়ি মোটরসাইকেল, রিকশা, কার-মাইক্রোবাস রাখা হয়। কোনো ভবনমালিকের ভবনের সামনে পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অসহনীয় যানজট তৈরি হচ্ছে শহরে। নাগরিকদের দুর্ভোগ দূর করতে তিনি অবিলম্বে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে নাটোর শহরের মধ্যে দিয়ে প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ এর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন জমি হারানো মালিকরা।

জমি মালিকরা জানান, ২০১৭ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনের তোয়াক্কায় করা হচ্ছে না। ৮ ধারার নোটিশে প্রদানের পর ৬০ কায্যদিবসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা বলা থাকলেও এক বছর পর কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীকে চেক প্রদান করে প্রকল্পটি চলমান রেখেছেন। এছাড়া গ্যাজেটে ১২০ কার্য্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের অনুকূলে টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে অধিগ্রহণের সকল কার্য্যক্রম বাতিলের কথা বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না । জমির মালিক গন আবেদন করেন প্রকৃত বাজার মূল্য নির্ধারণে সরকারের প্রতিনিধির পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রকে অন্তর্ভুক্ত করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃত বাজার মূল্য নির্ধারণ করার দাবি জানান তারা। এছাড়া সম্প্রতিক সময়ে নাটোর ছাড়া অন্যান্য জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণের যে দৃষ্টান্ত রয়েছে সেগুলো অনুসরণের দাবি জানান তারা।

সওজ নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ ইতিমধ্যে সরবরাহ করেছি। জেলা প্রশাসন আমাদের ভূমি বুঝিয়ে দিলেই অসমাপ্ত কাজটুকু শেষ করব।

সড়ক সম্প্রসারণ কাজের ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান বলেন, ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সওজ ও প্রশাসন কিছু কিছু জায়গা আমাকে বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারিনি। এতে আমি ব্যক্তিগতভাবেও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমার জামানতের টাকা আটকে আছে।

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শওকত মেহেদী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। প্রত্যাশিত সংস্থা (সওজ) সময়মতো টাকা ছাড় না করার কারণে মাত্র সাত দিন দেরি হয়েছে। করোনাসহ নানা কারণে এ বিলম্ব। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে মামলাবাজির কারণে। একটা মহল বাড়তি সুবিধা লাভের অপচেষ্টা করছে। তারাই বিনা কারণে মামলা করে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করছে।

আরও দেখুন

রাণীনগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারপিট করে  ১৫ভরি স্বর্ণের ও 

১০০ভরি চান্দির গহনা ছিনতাই নিজস্ব প্রতিবেদক রাণীনগর,,,,,,,,,,  নওগাঁর রাণীনগরে দোকান থেকে বাড়ী ফেরার  পথে পথ …