নারদ বার্তা পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সেই বাবা-ছেলে পাস করেছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বাবা ইমামুল ইসলাম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৯ এবং ছেলে আবু রায়হান পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৮২। বাবা ইমামুল ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডের এবং ছেলে রায়হান একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেডের ছাত্র ছিলেন। এক সঙ্গে পাস করায় বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে মেতে উঠেন তারা। ভালো ফল করায় তাদের বাহবা দেন সহপাঠী ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
পড়ালেখা বন্ধের দীর্ঘ ২৪ বছর বাবা ইমামুল ছেলের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ নিয়ে যুগান্তরে গত ৩০ নভেম্বর ‘বাগাতিপাড়ায় বাবা-ছেলের একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেসময় বাবা ইমামুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্তেও সংসারের অভাব অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণী পাশের পরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ২৪ বছর আগে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ১৮ বছর গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন।
২০১৬ সালে সেই কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে জমানো টাকা দিয়ে গ্রামে এসে মওসুমে আমের ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট মুদির দোকান দেন। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝে মধ্যেই তাকে পীড়া দিত। লোক লজ্জায় পড়া লেখা হয়ে উঠছিলনা। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই পারিবারিক সিদ্ধান্তে অবশেষে ২০২০ সালে ছেলের সাথে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তাদের বাড়ি উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামে।
পাসের পর উচ্ছসিত বাবা ইমামুল ইসলাম বলেন, তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন।
ছেলে আবু রায়হান বলেন, তার সঙ্গে তার বাবাও পাস করায় তিনি খুবই আনন্দিত। এদিকে বাবা ছেলের এক সঙ্গে পাসের খবরে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন্নাহার। তিনি তাদের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন।
