নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় দাদনের টাকা পরিশোধ না করায় দাদন ব্যবসায়ীর মারপিটে আহত হয়েছে আবু তাহের (৫৫) নামে এক পেয়ারা চাষী আহত হয়েছেন । সোমবার রাত সাড়ে ৯ টায় শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস সংলগ্ন কেয়ার হাসপাতালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। আহত চাষী আবু তাহেরকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নাটোর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত ১ টায় নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন সাহার নির্দেশে কুখ্যাত সুদ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে আটক করা হয় । আটক খোরশেদ আলম সদর উপজেলার চন্দ্রকোলা গ্রামের আব্দুল মন্ডলের ছেলে। এদিকে পেঁয়ারা চাষীকে মারপিট ও টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার আংশিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে । অপরদিকে নিরীহ পেয়ারা চাষী আবু হাহেরকে মারপিটের ঘটনায় কুখ্যাত সুদ ব্যবসায়ী খোরশেদকে গ্রেফতার করায় নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ।
জানা গেছে, নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকার কুখ্যাত দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসা করে আসছেন। একই এলাকার পেঁয়ারা চাষী আবু তাহের বছর দুই আগে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি পড়–য়া ছেলের সেমিষ্টার ফ্রি এবং জরী পারিবারিক প্রয়োজনে মাসিক ৬ হাজার টাকা হারে সুদে দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের কাছে সাদা ষ্ট্যাম্প এবং স্বাক্ষর করা চেক রেখে ১ লাখ টাকা দাদন নেয় । এর মধ্যে দুই বছরে লাভ দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা । এর মধ্য তিনমাস আগে সুদসহ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট টাকা দিতে দেরি হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ী তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।সোমবার রাতে সুদ ব্যবসায়ী পেঁয়ারা আড়ৎ এ গিয়ে আরোও দেড়লাখ গিয়ে টাকা দাবি করেন। দিতে না পারায় তারা পেঁয়ারা চাষীকে বেদম মারপিট করে টেনে হিঁচড়ে বাইকে তোলার চেষ্টা করে । এ সময় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায় । সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় ।
নির্যাতনের শিকার আবু তাহের জানান, আমি দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়ারা চাষ করে আসছি । আমার দুই ছেলেই অনেক মেধাবী ।বড় ছেলে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটে তখন পড়াশোনা করতো । ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সেমিষ্টার ফি এবং পারিবারিক প্রয়োজনে টাকাটা নিয়েছিলেন । টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এক মাস সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা সময় না দিয়ে তাকে মারপিট করেছে । এ ব্যাপারে তিনি নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানান
দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি দাদন ব্যবসা করিনা । ব্যবসার জন্য তার স্বাক্ষরিত সাদা ষ্ট্যাম্প ও চেক রেখে ১০ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম । সে আমাকে হিসাব না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে । সিসি টিভি ফুটেজের কথা বলতেই তিনি ফোন কেটে দেন ।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খবরটি শোনামাত্র নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নির্দেশে কুখ্যাত সুদ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় ।
সদর থানার ওসি মনসুর রহমান জানান, পেঁয়ারা চাষী আবু তাহেরকে মারপিটের অভিযোগ পেয়ে খোরশেদ আলম কে আটক করা হয়েছে । অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক বনবেলঘড়িয়া এলাকাবাসী জানান, খোরশেদ আলম এলাকার একজন কুখ্যাত সুদ ব্যবসায়ী । শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় আশো ফটো ষ্টুডিওর আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে । সাদা চেক এবং ষ্ট্যাম্পের স্বাক্ষর নিয়ে নিরীহ মানুষদের চড়া সুদে টাকা দিয়ে সহায় সম্পদ লুট করছে । আমি আপনি চাইলে এক টাকাও দাদন দেবেনা । নিরীহ মানুষ পাইলে লাখ টাকা দিতেই কার্পণ্য করেনা । সুদসহ টাকা তোলার জন্য মামলা ,হামলার ব্যবস্থা তো রয়েছে । তাছাড়া তেবাড়িয়া ইউনিয়নের হঠাৎ গজিয়ে উঠা একটি বাহিনীর নেতার ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খোরশেদ ভ অনেক নিরীহ মানুষ দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে সুদ দিতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে । এলাকায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন । তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।
চাষী আবু তাহের এক সময় বনবেলঘড়িয়া বাইপাস জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন ।ছেলে দুইটা মেধাবী হওয়ায় সল্প বেতনের চাকরি ছেড়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়ারা চাষ করে কোনমতে সংসার চালান ।দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেন । ধার্মিক ও নিরীহ প্রকৃতির আবু তাহের কেউ ১০ লাখ টাকা ধার দিবে এটা বিশ্বাস যোগ্য নয় ।