মঙ্গলবার , ডিসেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / আইন-আদালত / নাটোরে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আদালতের

নাটোরে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আদালতের

নিজস্ব প্রতিবেদক:নাটোরে থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং অফিসার ইনচার্জ এবং দুই উপপরিদর্শকসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের  বিরুদ্ধে মামলার আদেশ দিয়েছে লালপুর আমলী আদালত। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছেন লালপুর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন।

এসংক্রান্ত মামলা দায়ের করে ১৫ জুলাই এর মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপারকে আদেশ দেন আদালত।

লালপুর আমলী আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে আসামীরা অভিযোগ করেন যে, বড়াইগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব, লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. উজ্জল হোসেন, উপপরিদর্শক মো. জাহিদ হাসান, উপপরিদর্শক ওমর ফারুক শিমুল এবং অপর এক কন্সটেবল তাদেরকে নির্যাতন করেছেন।

বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ বিশ্বাস আরো বলেন, ১০ জুলাই বুধবার লালপুর থানা পুলিশ অটোরিক্সা ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার করে মোঃ সোহাগ হোসেন, মোঃ শামীম মোল্লা, মোঃ সালাম, এবং মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিব নামে চার আসামীকে আদালতে পাঠায়।

এদের মধ্যে আসামী মোঃ সোহাগ হোসেনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মোঃ ওমর ফারুক শিমুল আবেদন করেন। অন্যান্য আসামী মোঃ শামীম মোল্লা, মোঃ সালাম, এবং মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করেন। এসময় চার আসামীর মধ্যে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বাদে তিনজনই থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।

আসামী মোঃ সোহাগ হোসেন স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি না হয়ে আদালতের কাছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।

আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে মোঃ সোহাগ হোসেন বলেন, গত ৯ জুলাই রাত পৌনে আটটার দিকে আমার শ্বশুর বাড়ী উত্তর লালপুর গ্রাম হতে লালপুর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে রাত ৯ টায় লালপুর থানায় নিয়ে যায়। থানায় আসার পরপরই অফিসার ইনচার্জ মোঃ উজ্জল হোসেন তাকে চোখ বেঁধে মারধর শুরু করেন। তারপর ১১ জুলাই থানা হেফাজতে থাকা কালিন রাতে অফিসার ইনচার্জ মোঃ উজ্জল হোসেন তাকে ব্যাপক নির্যাতন করেন।

এরপর বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজিব তাকে বলে যে, যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার না করে তাহলে ওখান থেকে তাকে রিমান্ডে নিবে। তারপর এমন মামলা দিবে যাতে করে সে আর কোন দিন বউ বাচ্চার মুখ দেখতে না পারে।

অপর আসামি মো. সালাম তার জবানবন্দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তাকে ৯ জুলাই রাত ১টার দিকে তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে বিভিন্ন জায়গাতে ঘোরানোর পর ভোর ৫টার দিকে থানায় নিয়ে আসে। সেদিন তাকে মারধর করেনি।

পরদিন ১০ জুলাই ওসি থানায় ঢুকেই সালামের গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন। তারপর থানার উপর তলায় নিয়ে এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক শিমুল তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলের উপরে টেবিলের পায়া রেখে চাপ দিতে থাকে। এতে সেলিমের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের উপরে, মধ্যমা আঙ্গুল ও অনামিকা আঙ্গুলে মারাত্বক ভাবে ক্ষত হয়।

তারপর সালামের বাম পায়ের হাটুর নিচে থেকে পায়ের গোঁরালীর উপর পর্যন্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তারপর ১২ জুলাই তারিখ দুপুরের এসআই ওমর ফারুক শিমুল সেলিমের পাছায়  স্টিলের পাইপ দিয়ে পেটায়। এরপরে পুলিশ ওমর ফারুক শিমুল তাকে হুমকি দেয় যদি ম্যাজিস্ট্রেটের নির্যাতনের কথা বলে তাহলে বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা দিবে এবং জামিন হলেই জেলগেট থেকে তুলে নিয়ে যাবে।

আরেক আসামি মোঃ শামীম মোল্লাও অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে ১০ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে আসে। তারপর থানায় নিয়ে আসার সময় রাস্তায় মারতে মারতে নিয়ে আসে।

তারপর ১১ জুলাই সকালে থানার উপর তলায় নিয়ে গিয়ে একজন কনস্টেবল, এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুক শিমুল চোখ বেঁধে টেবিলের নিচে তার মাথা রেখে পাছায় মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রচন্ড রকমের মারপিট করেন। তারপর দুই পা বেঁধে পায়ের তালুতে পেটায় ও বুকে বারবার লাথি দিতে থাকে।

আসামীদের বক্তব্য ও শরীরে দৃশ্যমান আঘাত পর্যালোচনা করে সমস্ত আঘাত তাদের শরীরের সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পরিলক্ষিত হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আসামীরা পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ পেশ করলে থানা হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হওয়া আসামীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন।

বুধবার আসামীদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করার জন্য নাটোরের জেল সুপারকে এবং নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আসামীদেরকে শারিরিক পরীক্ষা করে তাদের শরীরে থাকা জখমের কারণ এবং জখমের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা দিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে ১৩ জুলাই বিকাল ৪টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

বৃহস্পতিবার নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. সামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আসামীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) আদালতে দাখিল করেন নাটোর সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক।

চিকিৎসকের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট পর্যালোচনা করে অভিযোগকারী তিন আসামীর মধ্যে মো. সালাম এবং মো. শামীম মোল্লার শরীরে নির্যাতনের প্রাথমিক সতত্যা পান আদালত। অপর আসামী সোহাগের শরীরে দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন নেই বলে চিকিৎসক প্রতিবেদন দিয়েছেন চিকিৎসক।

নাটোরের পুলিশ সুপারকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে অভিযুক্ত কর্মকর্তার নিম্নে নয় এমন কর্মকর্তাকে তদন্তের ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন আদালত।

এবিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, অটোরিক্সা ছিনতাই মামলার আসামীদের ধরতে গেলে তারা দৌড় দিয়ে পড়ে গিয়ে দাগটাগ হয়েছে। পরে আদালতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। আদালতের আদেশের কথা শুনেছি। আদেশের কপি পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে আনসার-ভিডিপির কম্বল বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জে,,,,,,,,,,,,,, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় মানুষের শীতের কষ্ট লাঘবের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *