রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো; দুইভাগে ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো; দুইভাগে ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

বিশেষ প্রতিবেদক:
করোনা মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটোরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এর নেতৃত্বে একটি অংশ শহরের কান্দিভিটুয়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই কর্মসুচি পালন করেন।

সকালে দলীয় নেতা-কর্মীরা জাতীয় সংগীত পরিবশেন করে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

অপরদিকে অন্য আরেকটি গ্রুপে দিবসটি একই রকমভাবে পালন করা হয়েছে। এই গ্রুপে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মালেক শেখ প্রমুখ।

এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, আমরা বিভক্ততা চাইনি, আমরা দলের স্বার্থে একসাথে কাজ করতে চাই কিন্তু তারা দলে বিভক্তি সৃষ্টি করছে, দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করে এহেন জঘন্য কাজ করেছে। ভুলের ক্ষমা হয় কিন্তু বেঈমানির ক্ষমা হয়না। এখন হাতে গোনা দুই-চারজন যদি হাতে মাইক নিয়ে বক্তব্য দেয় দলের বাইরে গিয়ে তাতে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। তাদের এই কাজে জেলা আওয়ামী লীগ ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা জানায়।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস জানান, আমাদের ব্যানারেও দেখুন লেখা আছে আয়োজনে জেলা আওয়ামী লীগ, এখানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের, তিনি আমাদের কথাও দিয়েছিলেন তিনি আজ উপস্থিত থাকবেন, কিন্তু তিনি আজ আসলেন না, পরবর্তীতে শোনা গেল তিনি সেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিপথগামীদের সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা চাই ঐক্য, যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছি, যেভাবে আমাদের সংগঠন/অঙ্গ সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ছিল ঠিক সেভাবেই শিমুল ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিবো।

এসময় জেলা যুবলীগের সভাপতি বশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া বলেন, দেখুন যারা এই বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে আমার মনে হয় তারা আদৌ আওয়ামী লীগ কি না? কারণ প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মীরা কখনো বিভক্তি চায়না। আমার তো মনে হয় তারা সুবিধাবাদী, কারণ আপনি দেখুন ওখানে যারা প্রোগ্রাম করছে তারা চিহ্নিত ব্যক্তি, তারা চাকরি করতো এমন সময় হঠাৎ পূর্বে যে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তার প্রতি চাটুকারিতা শুরু করেন, পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল মনোনয়ন পাওয়া মাত্রই তার প্রতি চাটুকারিতা শুরু করে দেন, তো এতে বোঝা যায় তারা দলের প্রতি কত একনিষ্ঠ, এদের সুবিধাভোগী ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, দেশ যখন করোনা মহামারীর মোকাবেলা করছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি কুচক্রী মহল যারা খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা, যারা এদেশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীকার কে বহন করেনা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের বিরোধিতাকারী সন্তানেরা দায়িত্বে রয়েছে এই নাটোর জেলায় এবং তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। যার কারণে আজকে প্রোগ্রামটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং আমাদেরকে বলা হয়নি যেটা অতীতের ন্যায় প্রতিটা প্রোগ্রামে আমাদেরকে বলা হতো, কিন্তু এই প্রোগ্রামে আমাদেরকে বলা হয়নি। এমনকি এটাও বলা হয়েছে আমরা যদি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি তাহলে আমাদেরকে প্রতিহত করা হবে এবং বাধা সৃষ্টি করা হবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমাদেরকে সেখানে যেতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। তাই এই সময় আমরা আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নিষ্পেষিত কর্মীদের একসাথে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি এর নেতৃত্বে এইখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মালেক শেখ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কোনো স্থায়ী কার্যালয় নেই, এই অফিসটি আমার বড় ভাই হানিফ আলী শেখের পত্রিকা অফিস, যাকে জোরপূর্বক ভাবে দখল করে বিতর্কিত এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সব সময় বিতর্কিত নেতাকর্মী, বিএনপি-জামাতের হাইব্রিড নেতা কর্মী, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান, টেন্ডারবাজি, ক্যাডার, গুন্ডা, বদমাইশদের সাথে নিয়ে চলেন আর আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মী তাদেরকে উপেক্ষিত করে তিনি এ সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমরা এইখানে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে কেক কেটে প্রাণের সংগঠন এর জন্মদিন পালন করছি। আপনারা সকলেই জানেন তিনি কিভাবে দেশের অর্থ কানাডায় পার করেছেন এবং নিজের সম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি দেশের শত্রু দশের শত্রু, আমরা তার সাথে নেই এবং এই ধরনের মানুষকে আওয়ামী লীগ কখনোই সমর্থন জানায় না।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু জানান, বড় দুঃখের বিষয় যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন অর্থাৎ শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি তিনি এই দায়িত্ব পালনে অপারগ, তিনিই দায়িত্বর কিছুই পালন করেননি এবং কোন আলোচনাও করেননি। আজকে এমন কোন জায়গা পাবেন না যেখানে শফিকুল ইসলাম শিমুল তার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে পকেটে ভরে রাখেনি, জামাত-বিএনপি’র বিভিন্ন ক্যাডার দিয়ে অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে, আপনারা সকলেই দেখেছেন শিমুল এমপির দুর্নীতির খবর, তিনি নাটোরের উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা তার স্ত্রীর নামে কানাডায় পাচার করে দিয়েছেন এবং বাড়ি কিনছেন। ইতিমধ্যে দুদক ও তার শত শত কোটি টাকার সম্পদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে, আমরা আশা রাখছি জননেত্রী শেখ হাসিনা আর কখনই এমন দুর্নীতিবাজ এমপিকে মনোনয়ন দেবেন না এবং তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখবেন না।

তবে পরবর্তীতে পুলিশের অনুরোধে তারা পৃথকভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করেছে বলে জানা যায়।

আরও দেখুন

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি আশার সঞ্চার করছে:দুলু

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন,গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে তারেক …