নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরে জন্মান্ধ উদয় চক্রবর্ত্তী এবং সমাপ্তি চক্রবর্ত্তীকে হারমোনিয়াম উপহার দেয়া হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় শহরের চকরামপুর এলাকায় তাদের মাঝে হারমোনিয়াম তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার। বহু কাংখিত হারমোনিয়াম পেয়ে আনন্দ ও ভালবাসা প্রকাশ করেন এই অন্ধ দম্পতি। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার জানান, উদয় চক্রবর্ত্তী নাটোর সদর উপজেলার হালসা এলাকার বাসিন্দা। জন্মান্ধ উদয় বোনের কাছেই মানুষ হয়েছেন। গান শিখেছেন রাজশাহীর ওস্তাদ অনুপ সরকারের কাছে। অপরদিকে তার স্ত্রী ফরিদপুরের জন্মান্ধ সমাপ্তি রায়ের ছোটবেলা থেকেই গানই জীবন। হাতেখড়ি পড়াশোনার চেয়ে গানেই বেশী। প্রায় ৪০ বছর ধরে গেয়ে যাচ্ছেন রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক আর লালন।
বাংলাদেশ বেতার, ঢাকার তালিকাভূক্ত রবীন্দ্র সংগীত আর লালন শিল্পী। তিনবার তিনি জাতীয় সংগীত সম্মিলন পরিষদের রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা, একবার খেলাঘর আসরের। শহরের চকরামপুর এলাকার ভাড়া বাসাটি সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত পুরষ্কারে ভরপুর। তালিম নিয়েছেন দেশ বরেণ্য শিল্পী মিতা হক ও রেজাউল করিম এবং ফরিদপুরের করুনাময় অধিকারীর কাছে। উদয় চক্রবর্ত্তী কাজ করতেন জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থায়। সংস্থার প্রধান মিনহাজ উদ্দিন সংগীত পাগল দুই জন্মান্ধ উদয় চক্রবর্ত্তী আর সমাপ্তি রায়ের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী করে দেন। এভাবেই চলছে একসাথে পথচলা। জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার জেলার কার্যক্রম এখন বন্ধ। তাই উদয় চক্রবর্ত্তী এখন কর্মহীন। তবে দুইজনই পান প্রতিবন্ধী ভাতা।
সমাপ্তি চক্তবর্ত্তী পান সরকারের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক ভাতা। এখন এই হারমোনিয়াম হয়ে উঠবে উপার্জনের অবলম্বন। তবে সমাপ্তি চক্রবর্ত্তীর প্রত্যাশা, কোন প্রতিষ্ঠানে সংগীত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পেলে তা হবে অনেক প্রশান্তির। অন্ধ দম্পতির নেশা আর পেশার প্রয়োজনে একটা হারমোনিয়াম প্রদানের পরিকল্পনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিনা সাত্তার। এ খবর জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন জেলা শাখার সদস্য সচিব রঘুনাথ কর্মকার। বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুজাউল হামিদের তত্তাবধানে তৈরী করা হয় বিশেষ হারমোনিয়ামটি। শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা বলেন, এ ধরণের সহযোগিতায় অংশগ্রহন করতে পারায় ধন্য মনে করছি। রঘুনাথ সরকার বললেন, মানুষের সেবাই পরম ধর্ম। সহযোগিতায় অংশগ্রহন অনেক প্রশান্তির। এই দম্পতিকে লেপ প্রদানকারী ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ এর যুগ্ম আহবায়ক জুলফিকুল হায়দার বাবু বলেন, য কোন প্রয়োজনে আমরা সব সময় এই দম্পতির পাশে আছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, সংগীত শিল্পী এই দম্পতির জন্যে একটা হারমোনিয়ামের বড্ড প্রয়োজন ছিলো।
এই যন্ত্রটা তাদের গানের নেশায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি, গান শিখিয়ে উপার্জনেরও একটা উপায় হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। চোখের আলো না থাকুক, মনের আলো জ্বেলে হারমোনিয়াম সাথে নিয়ে আনন্দ সুরে দিন কাটুক এই দম্পতির। আগামীতে এই দম্পতির প্রত্যাশিত হালসা এলাকাতে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।