সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / নাটোরে গুদাম কর্মকর্তা রফিকুলের দুইরকম জিডি, লক্ষবস্তু এমপি বকুল

নাটোরে গুদাম কর্মকর্তা রফিকুলের দুইরকম জিডি, লক্ষবস্তু এমপি বকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
নাটোরের লালপুরে ৩০০ বস্তা গম নিজ জিম্মায় রাখা গোপালপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি এলএসডি) রফিকুল ইসলাম একই ঘটনায় ভিন্ন বিবরণ সম্বলিত লালপুর ও বাগাতিপাড়া থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি(জিডি) নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

লালপুর ও বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লেখা জিডিতে কখনো চাঁদাবাজী, কখনো লাঞ্ছিত, কখনো পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন রফিকুল ইসলাম। আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ভিন্ন কথা বলেছেন তিনি। তবে তার এমন রহস্যজনক জিডি ও আচরণের লক্ষ্যবস্ত নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, এমন দাবী সাংসদ অনুসারীদের। লালপুর থানায় দায়েরের উদ্দেশ্যে লেখা জিডি ও বাগাতিপাড়া থানায় দায়ের করা জিডির কপি এসেছে এই প্রতিবেদকের নিকট। দুইটি জিডিতে কিছু পার্থক্য দেখা গেছে।

লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর দায়ের করা জিডিতে গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দাবী করেছেন, ‘জনৈক’ রোকন তাকে ফোন করে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের সাথে দেখা করার জন্য বলেন। তার কথা মতো ২৪শে জুন দুপুর ১.৩০ মিনিটে তিনি বাগাতিপাড়ার স্যান্নালপাড়ায় সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়ি সংলগ্ন অফিসে দেখা করতে যান। সেখানে ১০ মিনিট সাংসদের সাথে কথা বলার পর সাংসদ অফিস খেকে বাড়ি চলে আসেন। তখন সাংসদের অফিস কক্ষ থেকে বের হবার সময় রাসেল ও কালাম নামের দুই জন তাকে সাংসদের কক্ষে সাড়ে ৪ ঘন্টা আটকে রাখেন। এসময় একটি সাদা কাগজে রাসেল রফিকুল ইসলামের থেকে লিখিয়ে নেন যে রাসেল তার নিকট থেকে ৮ লাখ টাকা পান, যা তিনি সন্ধ্যার মধ্যেই পরিশোধ করবেন। এই অভিযোগটি গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম লালপুর থানায় দাখিলের জন্য নিয়ে গেলে ঘটনাস্খল বাগাতিপাড়া থানা হওয়ায় অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান তাকে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন। তখন লালপুর থানা থেকে বেরিয়ে তিনি বাগাতিপাড়া থানায় যান এবং আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন।

বাগাতিপাড়া থানায় দায়ের করা অভিযোগে রফিকুল ইসলাম জানান, ২৪ শে জুন ১২.২৪ মিনিটে জনৈক রোকন তাকে ফোন করে সাংসদের অফিসে আসতে বললে ১.৩০ মিনিটে তিনি দেখা করতে আসেন। সেখানে ১০ মিনিট সাংসদের সাথে কথা বলার পর সাংসদ অফিস খেকে বাড়ি চলে আসেন। সাংসদের অফিসে আগে থেকেই রোকন, রাসেল ও কালাম অবস্থান করছিলেন। রফিকুল ইসলাম কক্ষ থেকে বের হতে গেলে তিনজন তাকে কথা বলার জন্য বসতে বলেন। নানা অজুহাতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলার পর সন্ধ্যা ৬টায় তিনি বের হয়ে আসতে চান। এসময় রোকন ও তার সহযোগিরা তাকে তাদের সাথে গোপালপুর যেতে প্রস্তাব দিলে সকলে একসাথে বেরিয়ে আসেন সাংসদের অফিস কক্ষ থেকে। সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিটে স্যান্নালপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে পৌছালে তিনজন তার পথরোধ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। তারা জানায় গোপালপুরে চাকুরী করতে হলে তাদের কথামত টাকা দিতে হবে। তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানালে রোকন ও রাসেল তাকে মারধার করে।

এক পর্যায়ে সাথে থাকা অপরজন কালাম পেটে পিস্তল সর্দৃশ বস্তু ঠেকিয়ে একটি সাদা কাগজে লিখিয়ে নেন যে, তারা রফিকুলের কাছে ৮ লাখ টাকা পান। এসময় গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী তানভীর এগিয়ে এলে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। শুক্রবার দুপুরে এই গুদাম কর্মকর্তার জিম্মায় সরিয়ে রাখা ২০০ বস্তা সরকারী গম উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা প্রশাসন। গুদামে জায়গা না হওয়ায় তিনি সেগুলো একটি পরিত্যক্ত ভবনে সরিয়ে রেখেছিলেন।

কিন্ত এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি পত্র তিনি জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নেননি বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র লাল চাকমা। রবীন্দ্র লাল চাকমা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে গম উদ্ধারের পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে তাকে আটকে রাখা বা লাঞ্ছিত করা হয়নি। এদিকে, লালপুর থানায় দায়েরের উদ্দেশ্যে নেয়া অভিযোগটিই বাগাতিপাড়ায় থানায় দাখিল করার কথা জানিয়েছিলেন অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান। কিন্ত শুক্রবার রাতে দেখা যায় বাগাতিপাড়া থানায় দায়ের অভিযোগটি লালপুর থানায় প্রদর্শিত অভিযোগ নয়। তখন থেকে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারীরা অভিযোগ করেছেন, প্রথম অভিযোগে চাঁদাবাজীর কোন বিষয় ছিলো না। কিন্ত দ্বিতীয় অভিযোগে সুষ্পষ্টভাবে ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজীর অভিযোগ আনা হয়েছে। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত আইনের সুষ্পষ্ট বিধান বিদ্যমান থাকায় মামলায় অপরাধ সংঘটনের নতুন ধারা সংযোজনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে চাঁদা দাবীর ঘটনা ঘটলে প্রথম এজাহারেই চাঁদা চাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেন রফিকুল ইসলাম। অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় আরেকটি অভিযোগ তৈরী করে তা বাগাতিপাড়া থানায় দাখিলও রফিকুল ইসলামের পক্ষে কতটা সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আনিসুর রহমান বাবু বলেন, চাঁদা দাবীর প্রসঙ্গটি একটি অভিযোগে স্থান পেলেও আরেক অভিযোগে না পাওয়ায় প্রশ্ন এসেছে আসলেই কি চাঁদা চাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিলো? যদি সত্যিই তার কাছে চাঁদা দাবী করা হয় তবে প্রথম অভিযোগে তা উল্লেখ না করে কি ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিলেন তিনি। কার পরামর্শে তিনি দ্বিতীয় অভিযোগে চাঁদাবাজীর প্রসঙ্গ সংযোজন করলেন তা, তদন্ত করে বের করা দরকার।

লালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বাঘা বলেন, গুদাম কর্মকর্তা সাংসদের বাড়িতে নাটক করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তিনি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে সাংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একজন আইন প্রণেতার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ ও মানহানির চেষ্টাও এক ধরনের অপরাধ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম কাউসার বলেন, আমরা ষ্পষ্টত সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। সাংসদের অফিস কক্ষ বা রাস্তায় যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তিনি কেন তা সাংসদকে ফোন করে জানননি? তার না জানানোর পেছনে অন্যরকম ইঙ্গিত আছে।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …