নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির আওতায় নাটোরের হালসা ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চারবছর ধরে চলছে এই অনিয়ম।
এতদিন অনেক উপকারভোগীরা জানতেনই না তাদের নামে কার্ড হয়েছিল। সম্প্রতি উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই বাছাই করতে গেলে অনিয়মের বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। এরপর থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত এক ডিলার। আর মামলা হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছে অপর ডিলার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে হালসা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন পাঁচটি ওয়ার্ডে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ডিলার হিসাবে মনোনিত হয় ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ওহাব আলীর স্ত্রী জুলেখা বেগম। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির আওতায় ৭৫৪ জন উপকারভোগীদের মাঝে বছরে পাঁচবার জনপ্রতি ১০টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেবার কথা এবং অপর চারটি ওয়ার্ডে একই কর্মসূচির আওতায় ৭৫৩ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরণের দায়িত্ব পান ডিলার ইয়াকুব আলী। কিন্তু দীর্ঘ চারবছরেও অনেক উপকারভোগী জানতেন না তাদের নামে কার্ড হয়েছে। কার্ড নিজেদের কাছেই রেখে চাল তুলে আত্মসাৎ করেন ডিলাররা। বিষয়টি গোপন থাকায় এতোদিন বিষয়টি কেউ টের পায়নি। সম্প্রতি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছায়ের জন্য কমিটি গঠন করে দিলে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। ঘটনা তদন্ত করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
৩ নং ওয়ার্ডের আওরাইল গ্রামের বাসিন্দা রেনু বেগম জানান, তার নামে কার্ড হয়েছিল তা তিনি জানতেনই না। কিছুদিন আগে জানতে পারেন। তারপর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী বিষয়টি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেন।
২ নং ওয়ার্ড সুলতানপুরের সফুরুদ্দিন জানান, কয়েকদিন আগে তার কাছ থেকে ৩০০টাকা নিয়ে ৩০ কেজি চাল দিয়েছে ডিলার জুলেখা। কিন্তু জোড় করে একসাথে কার্ডে ১৫ থেকে ২০টা টিপ সই নিয়েছে।
আওরাইল এলাকার ভুক্তভোগী সামছুন্নাহার ও জহুরা বেগম জানান, কার্ড যাচাই বাছাই কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী ওহাব মেম্বার চাল না পাবার ব্যাপারটি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেছেন।
বিপ্রহালসা গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, আমার নামে কার্ড হয়েছে সেটা আমি জানতাম না। পরে এক বস্তা চাল দিয়ে ঘটনাটি কাউকে না জানাতে বলে ডিলার ইয়াকুব আলী। পরে আমি প্রতারণার অভিযোগ এনে তার বিরদ্ধে থানায় মামলা করি।
তবে সকল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। ডিলার জুলেখা বেগম জানান, তার ডিলারশীপ বাতিল করার জন্য প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আর মামলার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অপর ডিলার ইয়াকুব আলী। তার আগে ইয়াকুব আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা।
ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের লোকজনই অনিয়মের স্বীকার হলেও তা জানা নেই হালসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের। বিষয়টি নিয়ে চারিদিকে সমালোচনার ঝড় উঠলেও অভিযোগ পাবার পর ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন। পরে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, এই কর্মসুচির আওতায় কতোজন উপকারভোগী বঞ্চিত হয়েছেন তা তদন্ত করে বের করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।