শুক্রবার , মার্চ ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / কৃষি / নাটোরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে লিচুর মোকাম সরগরম

নাটোরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে লিচুর মোকাম সরগরম


নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাছে গাছে থোকা থোকা লাল লিচু। টসটসে লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। লিচুর গ্রাম নামে খ্যাত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, নাড়ানপুর, বেড়ঙ্গারামপুর ও শাহাপুর কালিনগর গ্রামের প্রতিটি লিচু বাগানের চিত্র এটি। এসব লিচু সংগ্রহ করে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে আড়তে। বিক্রির জন্য চলছে হাঁকডাকও। মৌসুমি ফলটি নিয়ে এই ব্যস্ততা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর কানু ব্যাপারীর বটতলায়।

নাজিরপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে মোজাফ্ফর জাতের আগাম লিচুর আবাদ হয়। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে এই লিচু সংগ্রহ শুরু হয়। গাছ থেকে সংগ্রহ করা লিচু দ্রুত মোকামে পাঠাতে প্রত্যন্ত গ্রামেই গড়ে উঠেছে লিচুর আড়তটি। সেটা ২০০১ সাল থেকে। তথ্যটি জানালেন স্থানীয় লিচু আড়তদার সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানকার মোকামে ১৫টি লিচুর আড়ত গড়ে উঠেছে। এই মোকাম থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক লিচু (প্রতি ট্রাকে ২০০ ঝুড়ি, এক ঝুড়িতে ২ হাজার ২০০টি লিচু থাকে) ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যান। এ কারণে কৃষকও লাভবান হচ্ছেন। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই মোকামের ব্যস্ততা। জুনের প্রথম সপ্তাহেই মোকামের ইতি ঘটবে।

আল্লাহরর দোয়া ফল ভান্ডার আড়তের স্বত্বাধিকারী সেলিম হোসেন জানান, এ বছর লিচুর উৎপাদন বেশি হলেও দাম অত্যন্ত কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর ২২শ থেকে ২৪শ টাকায় আড়তে লিচু কেনাবেচা হয়েছে। এ মৌসুমে আড়তে প্রতি হাজার লিচু প্রকারভেদে ১২শ থেকে ১৭শ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, এ বছর গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রায় ৪১৫ হেক্টর জমিতে মোজাফ্ফর, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলানায় ১২ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। এই লিচু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আগামজাত, সংখ্যায় বেশি ধরে, পোকার আক্রমণ কম হয়, সুস্বাদু ফলের ৬০ভাগ রসাল (খাদ্য উপযোগী) ৪০ ভাগ ফেলনা (আঁঁটি) এবং শতভাগ ফরমালিন মুক্ত। বাগান থেকে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে চাহিদা অনেক বেশি।

চাষি আকবার আলী জানান, তিনি এক একর জমিতে লিচু বাগান করেছেন। সার-কীটনাশক, সেচ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী গড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করবেন। এতে তিনি লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ফল ভান্ডার আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর বৃষ্টির কারণে লিচুর আকার ছোট হয়েছে। বাজারে তেমন পাইকারি ব্যবসায়ীও নেই। যার কারণে লিচুর দাম কম। যদি লিচুর দাম না বাড়ে তাহলে বাগান মালিকরা লোকসানে পড়বে। একটি আড়তে মৌসুমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সেই সঙ্গে আড়দাররাও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে তিনি জানান।

চাঁদপুর জেলা থেকে আসা পাইকারি লিচু ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে চাঁদপুরে বিক্রি করি। এখানকার লিচু অনেক রসালো ও মিষ্টি। অনেক সুস্বাদু হওয়ায় এ এলাকার লিচুর অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই চাঁদপুর থেকে আসি এখানকার লিচু কিনতে। এখানকার লিচু বিক্রি করতে তেমন অসুবিধা হয় না।

ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ বছর ধরে এ মোকাম থেকে লিচু কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এলাকার লিচুর আকার, রঙ, স্বাদ অনেক ভালো। এছাড়াও এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক ভাল। এজন্য এখান থেকে লিচু ক্রয় করে ঢাকায় বিক্রি করি।

যশোর থেকে আসা ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জানান, আড়তে লিচুর আমদানি পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু এ বছর লিচুর আকার কিছুটা ছোট। যার কারণে দামও কিছুটা কম। তবে লিচুর আকার বড় হলে চাহিদা এবং ভালো দামে বিক্রি করা যায়।

কথা হয় সিলেটের বাদামতলী থেকে আসা মা-বাবা ফল ভান্ডারের প্রতিনিধি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, সাত বছর ধরে এই মোকাম থেকে লিচু কিনে সিলেটে বিক্রি করেন। মৌসুমে প্রতিদিন তিনি দেড় থেকে ২ লাখ লিচু কিনে থাকেন। তাঁর মতে, এখানকার লিচুর আকার, রং, স্বাদ সবই ভালো।

একই ধরনের তথ্য জানালেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মৌসুমি ফল ভান্ডার, ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়ার মানিক ফল ভান্ডার, যাত্রাবাড়ীর বিক্রমপুর ফল ভান্ডারের প্রতিনিধিরা। তবে ঢাকার বাদামতলীর রিফাত এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম জানালেন ভিন্ন কথা। তারা আড়ত থেকে কোনো লিচু কেনেন না। তারা লিচুগাছে ফুল আসার পরপরই এলাকায় প্রতিনিধি নিয়োগ করে প্রায় কোটি টাকা দাদন দিয়ে থাকেন। তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা বাগানমালিকদের কাছ থেকে কম টাকায় বাগান কিনে থাকেন। এরপর লিচু সংগ্রহ করে আড়তে নিয়ে বাজারদর হিসেবে মূল্য পরিশোধ করা হয়। লগ্নিকৃত টাকার সুদ হিসেবে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। এভাবে তারা ৩০-৪০টি বাগান কিনে নিয়েছেন। এসব বাগানের লিচু সংগ্রহ করতে বেড়গঙ্গারামপুর কানু ব্যাপারীর বটতলার মোকামের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মোল্লাবাজার এলাকায় পৃথক আড়ত খুলেছেন তারা। সেখান থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচ ট্রাক লিচু তাঁদের ঢাকার মোকামে নেওয়া হচ্ছে।

আরও দেখুন

নাটোরে দুই মুরগি বিক্রেতাকে জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নাটোরের দুই মুরগি বিক্রেতাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক …