নারদ বার্তা ডেস্কঃ
সংযমের মাস রমজান। আজ তৃতীয় রমজান, ১৪৪১ হিজরী। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসে সারাদিন রোজা রেখে সংযম পালন করেন। রোজার সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেহরি খাওয়া। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সময়সূচি অনুযায়ী আজ ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ৪.০৩মিনিট। ঢাকার সময়ের সাথে ৫মিনিট যোগ করে নাটোরে সেহরির শেষ সময় ৪টা ০৮ মিনিট।
সুবহে সাদেক এর আগে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সেহরী বলে। অনেকের মধ্যে সেহরী না খেয়ে রোজা রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু, রাসূল সা:-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সেহরী খাওয়া কর্তব্য এবং সেহরী না খেয়ে রোজা রাখা স্বাস্থ্যর জন্য খারাপ।
রোজায় বছরে একটি মাসে বাকী এগার মাসের স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন করে সুবেহ সাদেক এর আগে ঘুম থেকে উঠে খেতে হয়। সাধারণ নিয়মে সকালের নাস্তার পরিবর্তে ফজরের আযানের আগেই সারাদিনের উপবাসের সময় চলার মতো খাবার গ্রহণ করতে হয়। রোজার প্রথম কয়েক দিন খাদ্যাভ্যাসে এই পরিবর্তনে কিছুটা কষ্ট হলেও আমাদের শরীরের যন্ত্রাংশগুলোও কিছু দিনের মধ্যেই এই নতুন নিয়মের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়।
সেহরী মুখরোচক সহজ পাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। সুস্থ দেহে রোজা রাখতে চাইলে সেহরির খাবারে কিছুটা নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা সেহরির খাবারের উপরেই নির্ভর করবে আপনার সারাদিনের সুস্থতা। কিছু খাবার আমাদের শারীরিকভাবে অনেক পুষ্টি প্রদান করে থাকে, আবার কিছু খাবার আমরা মজাদার বলে খাচ্ছি। কিন্তু সেগুলোই যে আমাদের প্রতিনিয়তই অসুস্থ করে তোলে, রমজানে কষ্ট বাড়ায় সেটা অনেকেই জানি না। তাই জেনে নিন এমন কয়েকটি খাবার যেগুলো সেহরীতে খেলে রোজা রাখায় কষ্ট বাড়বে আবার যে খাবারগুলো কখনই সেহরীতে খাবেন না। পাশাপশি কতটুকু খাবেন, সেহরীর কোন সময়ে খাবেন তাও তুলে ধরা হলো।
কতটুকু খাবেন?
অনেকে ভাবেন যে, সেহরীতে বেশি করে খেয়ে নেই, তাহলে সারাদিন ক্ষিদে লাগবে না। কথাটা আসলে ভুল। আপনি যতই খান না কেন, ইফতারের আগ পর্যন্ত তা পেটে থাকবে না। এই অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আপনার পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবে এবং সারাদিন আপনি বদহজম, পেট ফাঁপা, গ্যাস এর সমস্যায় ভুগবেন। আর এই রোজার মাস শেষে দেখবেন এই অতিরিক্ত খাদ্য আপনার পেটে চর্বি হিসেবে জমা হয়েছে।
কখন খাবেন?
সেহরীতে ফজরের নামাজের অন্তত ১ ঘন্টা আগে উঠুন। এমন ভাবে উঠুন যেন খাবার খেয়ে একটু হাঁটা চলা করার সময় পান। এরপর ফজরের নামাজ পড়া শেষ করে শুতে যান।
যে খাবার গ্রহণ করবেনঃ
সেহরীতে খাবেন শস্য জাতীয় খাবার যেমন চাল, গম, ওট, ভুট্টা, ভাত, রুটি খেতে পারেন। আমিষ জতীয় খাবার যেমন মসুর ডাল পাতলা করে খেতে পারেন। এছাড়া মাছ, মাংসও খেতে পারেন। প্রচুর সবজি খেতে পারেন। সবজি একেতো শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে, তৃষ্ণা কমায় পাশাপাশি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। দুধ, বাদাম, মধু খেতে পারেন। বাদামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো আমন্ড বা ওয়ালনাট। তাছাড়া চিনা বাদামও খেতে পারেন। মধু শুধু শুধু বা দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে ডায়বেটিস রোগীর জন্য এগুলো কোনমতেই প্রযোজ্য নয়।
ফল , যেমন খেজুর, আম, তরমুজ, কলা, আঙ্গুর খেতে পারেন। তরমুজ শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে আর আম, কলা, আঙ্গুর শক্তিতে ভরপুর। বিশেষ করে যারা দিনে বেলায় রোজা রাখা অবস্থায় প্রায়ই হাইপো হয়ে যান বা চিনি স্বল্পতায় ভুগে দূর্বল বোধ করেন, তারা আঙ্গুরের রস খেতে পারেন। এতে থাকা বিশেষ ধরণের চিনি অনেকক্ষন রক্তে থেকে হাইপো হওয়া রোধ করে।
যদি চা খাওয়ার বেশি অভ্যাস থাকে তাহলে সেহরীতে পাতলা বা কম লিকারের চা সামান্য লেবুর রস দিয়ে খান। সব পানি একেবারে সেহরীতে না খেয়ে ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত ভেঙ্গে ভেঙ্গে ৮ গ্লাাস পানি খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর।
যে খাবার বর্জন করবেনঃ
ডিম অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার যেটি শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন পূরণ করে থাকে। কিন্তু রোজার রাতের সেহরীতে এই ডিমের কোনো রান্না তরকারি খেলে আপনার পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে । ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ভাতের সাথে ডাল তো থাকবেই। কিন্তু সেহরীর রাতে কখনই ডাল ভুনা, মুগ বা বুটের ডাল খাবেন না। কেননা ডাল খালি পেটে প্রচুর গ্যাস তৈরি করে। ফলে আপনি সারাদিন পেটের ব্যথা অনুভব করবেন এবং অসুস্থ হয়ে যাবেন।
খিচুড়ী অত্যন্ত মূখরোচক খাবার। তবে এ খাবার শরীরকে গরম করে তোলে। অনেকের আবার পেটের সমস্যাও তৈরি করে। তাই সেহরীর সময় কখনই এই গরম খাবারটি খাবেন না। কেননা এটি আপনার পেট খারাপ করে দিতে পারে এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে যেতে পারেন। সেহরিতে কখনই অধিক তেলযুক্ত কোনো খাবার খাবেন না। পোলাও, বিরিয়ানি, ডালের বড়া বা অন্য ভাজাভুজি এড়িয়ে চলুন। এতে বারবার গলা শুকিয়ে পানি পিপাসা লাগাসহ নানান ধরণের সমস্যা দেখা দেবে।
খালিপেটে লেবু অ্যাসিডিটির সৃষ্টি করে। তাই সেহরিতে লেবু খাবেন না। তা না হলে আপনার কষ্ট করে রাখা রোজাটি মাকরুহ হয়ে যেতে পারে বাজে ধরনের অ্যাসিডিটির কারণে। কোল্ড ড্রিংকস আসলে অতিরিক্ত চিনি আর মিষ্টি ছাড়া কিছুই নয়। তাই সেহরিতে কখনই কোল্ড ড্রিংকস খাবেন না। সারাদিন বাজে ধরনের ঢেকুরে আপনি অসুস্থ হতে পারেন। সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস দেহকে পানিশুন্য করে ফেলে।
সেহরিতে খাওয়ার রুচি এমনিতেই সবারই কম থাকে। তাই বলে কখনই ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সেহরীতে খাবেন না। এতে করে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে এবং আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবেন। হজমে গড়বর দেখা দিতে পারে। সেহরীতে কখনোই সরাসরি প্রচুর চিনিযুক্ত ডেজার্ট খাবেন না । যেমন পায়েশ, মিষ্টি ইত্যাদি। চিনি রক্তে দ্রুত পৌছে আপনার ক্ষিদে কমিয়ে দিবে, ফলে আপনি সেহরীতে কম খাবেন।
সেহরীতে চা, কফি খাওয়া উচিত না। কেননা এতে থাকা ক্যাফেইন মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে শরীর থেকে পানি ও মিনারেল বের হয়ে তৃষ্ণা বেড়ে যায়। সেহরীতে অতি লবনযুক্ত খাবার, যেমন পনির, লবনযুক্ত শুটকী, আচার, সালাদ একদম খাবেন না। শরীরে পানির পরিমাণ শরীরে লবনের পরিমানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। শরীরে লবন বেশি থাকলে পানির চাহিদা ও তৃষ্ণা বাড়ে। সুতরাং সেহরীতে লবনযুক্ত খাবার খেলে দিনের বেলায় আপনার তৃষ্ণা বেশি পাবে। সেহরীতে অতিরিক্ত পানি খেয়ে পেট ভরে ফেলার অর্থ হয় না। বেশি পানি আপনার সারাদিনের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে না। শুধু শুধু পেট ভরবে।
বিকল্প খাবারঃ
অনেকে সেহরীতে ঘুম থেকে উঠে কিছুতেই ভাত খেতে পারেন না। যদিও সেহরীতে প্রচুর সবজি ও ফল খেতে বলা হয়, কিন্তু শুধু এগুলো খেয়েও রোজ রাখা সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে ভাত না খেয়ে কয়েকটি শক্তিদায়ক খাবার অল্প অল্প করে খেতে পারেন। পিনাট বাটার ও প্রচন্ড শক্তি প্রদানকারী খাবার। টোস্ট দিয়ে পিনাট বাটার খেতে পারেন পরিমিত পরিমানে, আমাদের দেশে শুধু আলুর রেসিপি কম থাকলেও অনেক দেশেও আলু মূল খাদ্য। আলুর তৈরি কোন ডিশ সেহরীতে ভাতের বিকল্প হতে পারে। দেশি রেসিপির মধ্যে হালিমও শক্তিদায়ক খাবার। এতে আছে কার্বোহাইড্রেট ও আমিষ। বাসায় তৈরি কম তেলের এক হালিমও হতে পারে আপনার সেহরী।