নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়াঃ
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাণিজ্যিক ভাবে কাশ্মীরি কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন আব্দুল বারী (বাকি)। উপজেলার চকতকিনগর ও সান্ন্যালপাড়া মাঠে ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় এক কোটি টাকার কাশ্মীরি কুল বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ভরা মৌসুমে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাশ্মীরি কুল। ফলের ভারে নুব্জ হয়ে গেছে এক একটি গাছ। প্রত্যেক গাছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি কাশ্মীরি কুল শোভা পাচ্ছে। দেখতে অনেকটা মাঝারি আকারের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের উপর লাল, স্বাদ হালকা মিষ্টি। তবে আপেলের থেকে কাশ্মীরি কুলের স্বাদ ভালো।
এই অঞ্চলে আগে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ হলেও এই প্রথম কাশ্মীরি কুলের চাষ, প্রথম বছরেই হয়েছে বাম্পার ফলন। তার এ সফলতায় উপজেলার অনেক কৃষকই এখন কাশ্মীরি কুল চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ক্ষন্দকার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল বারী (বাকি) ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত এস. এস. সি পরীক্ষায় মানবিকে ২য় বিভাগে পাশ করেন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে আর লেখা-পড়া করা হয়নি তার। বেশ কয়েক বছর বেকার ছিলেন তিনি। কিন্তু বেকারত্ব জীবন কুরে-কুরে খাচ্ছিল তাকে, বেকারত্বকে কিছুতেই মানতে পারছিলেননা। এক পর্যায়ে পৈতৃক জমিতে স্বল্পপরিসরে সবজি চাষ শুরু করেন। সবজি চাষের সুবাদে ২০০৭ সালে কর্মরত বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তন্ময় দাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকারের সঙ্গে একদিন কথা হয় তার। তাদের অনুপ্রেরনায় ওই বছরই, পৈতৃক ও লিজকৃত ৬ বিঘা জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ করে সফলতা পান তিনি। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন নিজ উপজেলা, পার্শ্ববর্তী উপজেলা লালপুর, নাটোর সদর, এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর মেয়াদে মোট ১৯৫ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন তিনি।
লিজকৃত ১২০ বিঘা জমিতে রয়েছে থাই-৩ জাতের পেয়ারা, ৩০ বিঘা জমিতে কমলা, ১০ বিঘা জমিতে মালটা এবং নিজ মালিকানাধীন জমিতে রয়েছে আম ও লিচু বাগান। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর পাবনা হর্টিকালচারের উপ পরিচালক কে. জে.এম আব্দুল আওয়াল এর পরামর্শে বাণিজ্যিক ভাবে কাশ্মীরি কুল চাষের উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেন।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের নাজমুল নার্সারী থেকে প্রতিটি ৫০ টাকা দরে ২৫০০ কাশ্মীরি কুলের চারা কিনে আনেন। এবং লিজ নেয়া ২৪ বিঘা জমিতে রোপন করেন। এর আগে বিভিন্ন প্রজাতির কুলের চাষ করলেও নতুন এই জাতের কুল এবারই প্রথম চাষ করেছেন।
কুলচাষি আব্দুল বারী জানান, বাগাতিপাড়ায় তিনিই প্রথম কাশ্মীরি কুলের চাষ করেছেন। অন্য কুলের থেকে এ কুলের চাহিদা বেশি। চারা রোপন, জমির চারপাশে ঘেরা ও পরিচর্যা বাবদ ২৪ বিঘা জমিতে এপর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
ইতি মধ্যে বাগান থেকে কুল বিক্রয় শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথম বছরে গাছ খুব ছোট থাকায় অল্প কিছু টাকার কুল বিক্রি করলেও এই বছর প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ১২ লাখ টাকা স্থানীয় বাজারে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও পাবনায় পাইকারী বিক্রয় করেছেন।
আর এখনও গাছে যে কুল আছে আশা করছেন ৮৫ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারবেন। ইতিমধ্যে পাইকার ব্যপারীরা জমিতে এসে দাম করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি দিন গড়ে ১০০ জন লোক তার বিভিন্ন বাগানে কাজ করে থাকেন। ফলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বাগান পরিদর্শন করে জানান, আব্দুল বারী (বাকি) একজন সফল চাষী। উপজেলায় নতুন জাতের এই কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই জাতের কুল আকারে বেশ বড়, সুস্বাদু এবং চাষে লাভজনক। বেকার ও শিক্ষিত যুবকরা কুল চাষে এগিয়ে এলে একদিকে বেকারত্ব দূর হবে, অপরদিকে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও তরান্বিত হবে। তিনি কুল চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।