নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
গুড় তৈরির কাঁচামাল আখের রসের বালাই নেই। শুধুমাত্র চিনির সঙ্গে চুন, ফিটকারি, ডালডা, হাইড্রোজ আর রং মিশিয়েই তৈরি হচ্ছে এক আজব গুড়। নাটোরের বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় এরকম গুড়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব গুড় নাটোর শহরে বিক্রি হয়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার নূরপুর মালঞ্চি চকপাড়া গ্রামে মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মাসুম রেজার বাড়িতে গুড় তৈরি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও এর আগে ভ্রাম্যমান আদালত উপজেলার বেশ কয়েকটি কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়ে এসব কারখানা থেকে ভেজাল গুড় জব্দ করে নদীতে ফেলে ধ্বংশ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় এখনও আখের মওসুম শুরু হয়নি। এমনকি কোন প্রকার খেজুরের রসও নেই। তবুও এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে গুড়। চিনি গলিয়ে তার সাথে চুন, ফিটকারি, ডালডা, হাইড্রোজ, রং মিশিয়ে কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এসব কারখানায় গুড় তৈরির কারিগর বা শ্রমিকরা কাজ করেন। কারখানায় তৈরি গুড়ের পাটালি ভ্যান বা অটোযোগে পাঠানো হয় নাটোর শহরে। সেখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এসব গুড়।
মঙ্গলবার দুপুরে নূরপুর মালঞ্চি চকপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে মাসুম রেজার বাড়িতে গুড় তৈরি করতে দেখা যায়। সেখানে পানিতে চিনি গলিয়ে তার মধ্যে কেমিক্যাল মিশিয়ে কড়াইতে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার মালিক মাসুম রেজা জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চিনি থেকে তিনি এসব গুড় তৈরি করেন। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জেনেও এসব গুড় কেন তৈরি করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, হাইড্রোজ, ফিটকারি, ডালডা, চুন এসব মেশালে মানুষের শরীরে ক্ষতি হওয়ার কারন নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের গাওপাড়া, চকতকিনগর, তকিনগর, সদর ইউনিয়নের নূরপুর চকপাড়া গ্রামে এসব গুড়ের বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। এসব এলাকা থেকে ইতোপূর্বে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান ভেজাল গুড় জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত। কোন কোন কারখানা মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে।
গত ৪ জুলাই বিকালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল চকতকিনগর এবং নূরপুর চকপাড়া গ্রামে এসব ভেজাল গুড় কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে চকতকিনগর গ্রামের কালুর ছেলে লিটন আলীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নূরপুর চকপাড়া গ্রামে আশরাফ আলীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩০ মণ গুড় জব্দ করে। পরে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জব্দ করা গুড় তমালতলা ব্রীজ এলাকায় বড়াল নদে ফেলে ধ্বংশ করা হয়। এর আগে গত ১ জুলাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত আনজুম অনন্যার ভ্রাম্যমান আদালত চকতকিনগর ও তকিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ভেজাল গুড় জব্দ করে বড়াল নদে ফেলে দিয়ে ধ্বংশ করেন। এছাড়াও চার কারখানা মালিক তকিনগর গ্রামের আবু রায়হান, জাইদুল ইসলাম, চকতকিনগর গ্রামের রেজাউল এবং লিটনকে অর্থদন্ড দেয়া হয়। উদ্ধার করা হয় গুড় তৈরির উপকরন চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকারী, রং।
এছাড়াও গত ২৭ জুন দুপুরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের গাঁওপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় পানি, চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকারী এবং বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করায় সাড়ে ৫২ মণ ভেজাল আখের গুড় জব্দ করে। পরে জব্দ করা গুড় বড়াল নদের পানিতে ফেলে দেয়া হয় এবং কারখানার মালিক শামীম আহমেদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এব্যাপারে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার বলেন, চিনির সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে এসব ভেজাল গুড় তৈরির খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছে। এরপরও যদি কেউ এমন করে তবে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আরও দেখুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …