শুক্রবার , এপ্রিল ১১ ২০২৫
নীড় পাতা / কৃষি / নাটোরের বড়াইগ্রামে ভাসমান সবজি চাষ

নাটোরের বড়াইগ্রামে ভাসমান সবজি চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রামঃ
বৈচিত্রময় নাটোরের কৃষিতে সংযোজন ঘটেছে ভাসমান সবজি চাষের । নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষকরা নদী আর বিলের পানিতে কচুরিপানার বেড তৈরি করে সবজি চাষ করছেন । কীটনাশকের ব্যবহার নেই বলে উৎপাদিত সবজি নিরাপদ । আবাদি জমি কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জলাধারের এই সবজি চাষ কৃষি উৎপাদনের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় , ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা , সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বাটরা, বাঘইট, মেরিগাছা, ধানাইদহ, তারানগর গ্রামে বয়ে যাওয়া নারদ ও খলীসাডাঙ্গা নদী এবং চিনি ডাঙার বিলে কচুরিপানা ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ভাসমান বেড । এসব গ্রামের ৩১ জন কৃষক শতাধিক বেডে উৎপাদন করছেন লালশাক, কলমি শাক, পালং শাক, কলা শসা । কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, ও প্রযুক্তি সহযোগিতা প্রদান করছে কৃষি দপ্তর । পাশাপাশি প্রদর্শনীর বেড স্থাপন এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমেও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের।

উপজেলার নগর ইউনিয়নের বাটরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ চিনি ডাঙ্গার বিলের জমিতে কচুরিপানা দিয়ে আটটি বেড তৈরি করেছেন । সেখানে লাল শাক, গীমা কলমী, লাউ ও শসার চাষ করছেন তার পাশে আব্দুল বারী, রাশেদুল ইসলাম, ফিরোজুর রহমানসহ ৭ জন কৃষক একই সবজি আবাদ করেছেন । ও শসা চাষের জন্য তারা বিলের মধ্যে মাচা তৈরিও করেছেন ।

কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ খুবই লাভজনক । বেডে প্রাকৃতিক উপাদানে জৈবিক সক্ষমতা অনেক বেশি থাকে । কোন প্রকার সার প্রয়োজন হয় না বললেই চলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতেই হয় না । আবার যে জমিতে সবজির চাষ করা হচ্ছে, জলাবদ্ধতা ও কচুরিপানার কারণে সেখানে কোন ফসল হতো না । একএসব জমিতে পানি শুকিয়ে গেলে শুধু বোরো ধান আবাদ হয়ে আসছিল । এখন অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এসব জলাধার ব্যবহার করে তারা শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারছেন । কৃষক আব্দুল বারী জানান চলতি বছর তার এক বিঘা জমিতে ভাসমান বেডে করে সবজি চাষ করেছেন । ইতিমধ্যে সবজি বিক্রি করে প্রায় লক্ষ টাকা আয় হয়েছে । এসব বেডে সবজি চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই, আগাছারও আধিক্য নেই ।

আবাদ শেষ হয়ে গেলে কচুরিপানার বেড উন্নত মানের জৈব সার হিসেবে তারা বোরো ধান আবাদে ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক রাশেদুল ইসলাম । তিনি বলেন, নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে ও চাষাবাদের খোঁজখবর নিতে প্রায় প্রতিদিন আশেপাশের কৃষকরা ভাসমান বেড এলাকায় ভিড় করছেন ।

উপজেলা কৃষি অফিস ভাসমান সবজি চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়াও বেড নেট , সবজি বীজ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রদান করছে । প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়াও সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কৃষকদের অংশগ্রহণে বাটরা মাঠের আয়োজন করা হয়। মাঠ দিবস ভাসমান সবজি চাষের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে উপকৃত হয়েছেন অংশগ্রহণকারী কৃষকরা । তারা জানিয়েছেন, আগামী মৌসুমে তাদের বাড়ির পাশের জলাধারে বেডে সবজি চাষ করবেন । এতে করে আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে ভাসমান বেডে আবাদের পরিধি বাড়বে ।

উপজেলায় তথা সমগ্র জেলায় নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতির সাথে কৃষকদের মেলবন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার ইকবাল আহমেদ । কৃষি অফিসার বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ লাভজনক । আবার বিশ মুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ও জলবায়ুর জন্য উপকারী। যে সকল স্থানে সবজি চাষ হচ্ছে সেখানে কচুরিপানা জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক কোনদিন এসব জলাধার ব্যবহার করতে পারতেন না । ভাসমান বেড তৈরিতে কচুরিপানা ব্যবহার করা হচ্ছে । এই কচুরিপানা পরবর্তীতে জৈবসারে পরিণত হচ্ছে । আবার জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে না । জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনোনীত দেশের কৃষিতে একমাত্র “বিশ্ব ঐতিহ্য”- এই চাষাবাদ পদ্ধতি একসময় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী এই কৃষিবিদ ।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ডক্টর রবিআহ নূর আহমেদ বলেছেন, বড়াইগ্রামে ভাসমান বেডে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । অন্যান্য উপজেলায় বিশেষ করে চলনবিল ও হালতিবিল এলাকায় এই চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কাজ করবে।

আরও দেখুন

বড়াইগ্রামে কলেজ অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ এবং সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বড়াইগ্রামে কলেজ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ তুগলককে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন …