“নারী তুমি নিজেই উলঙ্গ হয়ে যাও”
আমি আর কোনও ধর্ষণের প্রতিবাদ করব না।
আমি আর কখনোই বলাৎকারের বিরুদ্ধে দু’কলম লিখব না।
আমি কোনও প্রতিকার চাইব না পৃথিবীর নিয়ন্তার কাছে।
প্রতিকার চাইব না সমাজ,
রাষ্ট্র ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে।
আমি নারী, আমি ভুক্তভোগী।
আমি নিজেই আজ থেকে নির্লজ্জ হবো।
নির্লজ্জতার চরম সীমা অতিক্রম করে,
আমি পৃথিবী বদলের নতুন ইতিহাস রচনা করব।
হে নারী!
কে তোমার পিতা?
কে তোমার ভ্রাতা,স্বামী, পুত্র, বন্ধু, পরিজন?
তুমি মুখোমুখি হও তার।
তার চোখে তোমার চোখ প্রতিস্থাপন করো,
এক হেঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেল তোমার শরীরের আব্রু।
আর কোনও পোশাক নয়,
নয় কোনও পরিচ্ছদ ধারণ!
তুমি আজ থেকে উলঙ্গ হাঁটো নারী।
যেখানে স্রষ্টা তোমাকে সৃষ্টি করে ছেড়ে দিয়েছেন হায়েনার কারাগারে।
যেখানে তোমাকে সম্মান দেয় না,
পিতা,
পুত্র,
ভ্রাতা ও বন্ধু।
যেখানে তোমার জঠর থেকে পয়দা হওয়া সন্তান তোমায় উলঙ্গ করতে বদ্ধপরিকর;
সুযোগ পেলেই করে তোমার বস্ত্রহরণ!
সেখানে তুমি স্বইচ্ছায় সৃষ্টি করো নতুন দৃশ্যপট।
বদলে দাও পৃথিবী বিদীর্ণ করা এ নির্লজ্জতার ইতিবৃত্ত!
আজ থেকে তুমিও আর তোমায় কোনও পোশাকে আচ্ছাদিত করবে না,
এ উলঙ্গ পৃথিবীর নির্লজ্জ জাতিসত্তাকে এসো উন্মুক্ত করে দাও;
তোমার শরীর, তোমার শরীরের যোনীপথ।
দেখো কত মাতাল হতে পারে পুরুষ;
কতটা উন্মত্ততা রোপণ করে দিয়েছেন স্রষ্টা পুরুষ শরীরের পৈশাচিকতায়!
কতটা উন্মুক্ত নির্লজ্জতায় মেতে ওঠার সাহস আছে পুরুষের!
কতটা কামুকতা ধারণ করে তারা।
আড়ালে আবডালে নয়,
নয় ক্ষমতার দম্ভতা দেখিয়ে লোক চক্ষুর সম্মুখে মায়ের বস্ত্রহরণ।
আহ্ হা! ক্ষমতা!
তুমিও কতটা নির্লজ্জ হলে এতো পাপ ধারণ করতে পারো ক্ষমতা?
মানবতার খেতাব গলায় পরে,
মানবতার পোশাক পরিহিত তুমি হে আমার প্রিয় জননী;
তোমার কী কষ্ট হয় না?
তোমার কী কান্না পায় না?
তুমি কী ঘুমাতে পারো মাগো?
আমি নারী, আর যে আমি তোমার কাছে কিছুই চাই না মা।
তুমি ঘুমাও মা আমার,
তুমি ঘুমাও হে জাতিসত্তা আমার!
ও হে নির্লজ্জ পুরুষ!
সত্যিকারের সাহস থাকলে,
সত্যিকারের পুরুষ হলে, এসো।
এসো একজন দু’জন নয়,
সকল পুরুষ সর্ব সম্মুখে আজ ধর্ষণ উৎসবে মাতো।
তোমাদের মন ও মস্তিষ্কের গভীরে যে কামবিষ আছে,
এসো সকলেই তা উগড়ে দাও জনসম্মুখে সবার।
নারী নিজেই আজ বর্জন করবে পোশাকের বিতণ্ডতা!
হে স্রষ্টা!
তুমি কোথায়?
কার বেশি ক্ষমতা?
কে বেশি ক্ষমতাবান?
কে খেলছে এই ভয়ঙ্কর বীভৎস খেলা?
কে হাসছে আবডালে?
আর কত?
আর কতটা বীভৎসতা তোমাকে নাড়াতে পারবে আল্লাহ?
কার ইশারায় চলে পৃথিবী?
কে করে আর করায় ব্যভিচার?
কে সেই রহস্যময় সৃষ্টি উল্লাস!
তুমি কার খেলার দুর্বাঘাস হে নারী!
কেমন অনায়াসে তোমাকে মাড়িয়ে যায় পুরুষ নামের কুকুর অবিরাম!
সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি, একই খেলায় শামিল পুরুষ নরপিশাচ।
হে পুরুষ!
তুমি জবাব দাও!
পোশাকের উপর দায় চাপিয়ে তুমি টেনে খোলো পোশাক!
তুমি নও?
তাহলে কে সে?
কারা এরা?
প্রতিটি সম্পর্কের মুখোশের আড়ালে এরা কুকুর,
এরা হায়েনা,এরা নির্লজ্জ পুরুষ।
এরাও তো কারও পিতা,
ভ্রাতা,স্বামী, পুত্র, পরিজন!
এরা ধর্ষক এরা ভণ্ড।
এদের কারোরই লজ্জা নেই,
তুমি আর লজ্জা দিয়ে কি করবে হে নারী!
তোমার পোশাকের দোষ,
নিয়মিত তুমি আব্রুর দোষে দোষী।
এসো এবার উন্মুক্ত করো,
খুলে ফেল পোশাক পরিচ্ছদ।
খুলে ফেল যত আব্রু তোমার,
খুলে ফেল দ্বিধাহীন দুঃসাহসে।
খুলে দাও পুরুষদের কামার্ত চোখের বায়ুমণ্ডলে তোমার সৃষ্টি রহস্য।
আর কোনও ভয় নয়, শংকা নয়, নয় লজ্জার প্রহসন!
তুমি সদর্পে ঘুরে বেড়াও বিবস্ত্র অবয়বে।
তোমার উন্মুক্ত শরীর দেখতে দেখতে পৃথিবীর তাবৎ পুরুষ জাতির চোখে ছানি পরুক।
ওরা তোমাকে এভাবেই খুবলে খাক।
ভুলে যাও হে নারী তুমি মানুষ।
আজ থেকে উলঙ্গতাই হোক তোমার একমাত্র প্রতিবাদ।
উলঙ্গতাই হোক তোমার একমাত্র সম্ভ্রম!
হায়েনাদের চোখে জ্বালা ধরুক।
নারী শরীর দেখতে দেখতে শিশু পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হয়ে বেড়ে উঠুক।
ঘুম থেকে উঠে পুরুষ মা,স্ত্রী, কন্যা, বোন, প্রতিবেশি,
বন্ধু সকলকে নিয়মিত উলঙ্গ দেখুক।
ওদের কামার্ত চোখ,ঠোঁট, হাত ও যৌনাঙ্গ কোনও গোপনীয়তা না খুজুক,
না করুক আর জোর জবরদস্তি।
নারীকে জনসমক্ষে আর আলাদা করে বিবস্ত্র হতে হবে না,
নারী যে এখন থেকে বিবস্ত্রই থাকবে।
আজ থেকে পুরুষ তার নাস্তার টেবিলে খুবলে খাক নারী শরীর,
ভাতের প্লেটে তুলে নিক নারীর যোনিপথ।
স্কুলব্যাগে ভরে নিক নারীর বুকের উন্মাদনা।
বুক পকেটে গুঁজে নিয়ে ঘুরে বেড়াক নারী শরীরের খানাখন্দ।
আর কোনও গোপনীয়তা নয়,
আর কোনও প্রতিবাদ নয়।
আর কোনও লেখালেখি নয়!
হে নারী!
তুমিই তোমার উলঙ্গ শরীর পেতে দাও বইয়ের পাতায়।
সংবাদপত্রের শিরোনামে,
কবির কলমে।
কবিতার অক্ষরে অক্ষরে,
রাষ্ট্র প্রধানের গলার মালায়।
সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা পিতার সমাধি সৌধের পাদদেশে।
আর কোনও ধর্ষণের প্রতিবাদ মিছিলে আমি কোনও পুরুষকে দেখতে চাই না।
কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের জাতির উদ্দেশ্য ধর্ষণের বিরুদ্ধে ভাষণ চাই না,
চাই না সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা কোনও আইন। চাই না ফাঁসির প্রহসন।
আমি একজন নারী,
শরীর আমার। নারীত্ব আমার,
ইচ্ছে, দুঃখ, জ্বালা,যন্ত্রণা আমার; আমিই সিদ্ধান্ত নিলাম।
এসো হে নারী,
এসো আমরা নিজেরাই উলঙ্গতা ধারণ করি।
আমরা পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে অভ্যস্ত করে দেই,
উলঙ্গতার মহোৎসবে। অভ্যস্ত করে দেই উন্মুক্ত নারী শরীরে।
পুরুষের চোখে বিতৃষ্ণা ধরে যাক,
পুরুষের মনের কামার্ততা মিটে যাক।
পুরুষরা নারী শরীরের উন্মুক্ততা দেখতে দেখতে,
কুকুর থেকে একদিন মানুষে পরিনত হোক।
না হয় কুকুরই থেকে যাক আজন্ম আজীবন।
হে নারী এসো ধর্ষণের প্রতিকারে আমরা উলঙ্গ হয়ে যাই।
বস্ত্রহরণের প্রতিবাদে আমরাই বস্ত্র খুলে ফেলি।
পৃথিবীর বিবেক বলে কিছু অবশিষ্ট আছে কি-না দেখি আর একবার!
দেখি আমার এ দুঃখ দহনে,
আমার এ নবতর প্রতিবাদের বিপরীতে তথাকথিত সম্মানিত পুরুষ জাতিসত্তার পক্ষ থেকে,
কী কী উপঢৌকন আসে।
লেখিকা: নাজনীন নাহার