বুধবার , নভেম্বর ৬ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / নলডাঙ্গার আকাশে উড়ছে শতশত রঙিন ঘুড়ি

নলডাঙ্গার আকাশে উড়ছে শতশত রঙিন ঘুড়ি

মুক্তা আহমেদ, নলডাঙ্গা:
ঘুড়ি উড়ানো বাঙালি ঐতিহ্যের প্রাচীনতম শখ ও খেলা। অধিকাংশ গ্রামের ছেলেরা ছোটবেলা শখের বশে ঘুড়ি বা চং উড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া পৃথিবীর জনজীবনে একটুুু হলেও সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে ঘুড়ি। কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই চাকুরী হারিয়ে শহরের যান্ত্রিক পরিবেশের কোলাহল ছেড়ে গ্রামে এসে বসবাস করছেন।

এই পরিস্থিতিতে থমকে যাওয়া জনজীবনে স্বস্তি  নিয়ে নাটোর জেলার নলডাঙ্গার আকাশে উড়ছে শতশত বাহারি রঙের ঘুড়ি। লাল-নীল-সাদা-কালো-হলুদ-খয়েরী-গোলাপি এ যেন প্রকৃতির এক অবাক করা মনোরম দৃশ্য। বিকাল হলেই নলডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে ,মাঠে-প্রান্তরে, রেললইনের ধারে চলছে ঘুড়ি ওড়ানোর এক অন্যরকম আয়োজন। হাতে লাটাই আকাশে ঘুড়ি দলবেঁধে লাইনে দাঁড়িয়ে চলছে ঘুড়ি উড়ানোর ধুম। কে কত উপরে উঠাতে পারে তার ঘুড়ি। নাতি বায়না ধরেছে ঘুড়ি ওড়াবে নাতির আবদার মেটাতে দাদা দা হাতে করে চাঁচছেন বাঁশ আর দাদি খুঁজছেন রঙিন কাগজ। এ যেন গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের শোভিত এক রঙিন পরিবেশ। ছোট বড় লম্বা চিকন অনেক রকম নানা রঙের ও ঢংয়ের ঘুড়ি উড়ছে আকাশ জুড়ে। আবার কেউ কেউ ঘুড়ি ওড়ানোর টিম বানিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে মিসাইল ঘুড়ি ,কয়রা ঘুড়ি, চিলা ঘুুড়ি ,ঢোলক ঘুড়ি ,সাপা ঘুড়ি। আবার রাতের বেলায় ঘুড়ি গুলোতে লাইটিং করে চলেছে ঘুড়ি ওড়ানো। ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজনে নলডাঙ্গাবাসী এখন বিমোহিত।

নলডাঙ্গা উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আক্কাস আলী বলেন, ঘুড়ি উড়ানো আমার একটি শখ, নীল আকাশে ঘুড়ি উড়াতে আমার অনেক ভালো লাগে।আমি এলাকার অনেককে এ বছর ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছি সেই ঘুড়িগুলো আকাশে উড়ছে আমার খুব আনন্দ লাগছে।

ঘুড়ি উড়ানোর এমন আয়োজন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া দেখে বুড়িরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও সমাজ সেবক মকছেদ আলী ফকির বলেন, ঘুড়ি ওড়ানো বাঙালি ঐতিহ্যের আদি সভ্যতা ও নিদর্শন। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব থেমে গেছে মানুষ নিজ গণ্ডির মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। বন্দীদশার জীবনকে টেনশন থেকে মুক্ত রাখার জন্য মানুষ মনের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়াচ্ছে। এরকম দৃশ্য আমি কখনো দেখিনি।এমন আয়োজনকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে আরও বলেন,যান্ত্রিক জীবনে করোনার টেনশনে মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতংকিত , তখন ঘুড়ি ওড়ানোর এমন প্রয়াসকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিনি।

ঘুড়ি উড়ানোর এরকম দৃশ্য দেখে নলডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ডাক্তার মোহাম্মদ শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ছোট বেলায় আমরা বিকেল হলেই ঘুড়ি উড়াতাম বর্তমানে যা চোখে পড়ে না। তবে করোনাকালীন এমন সময়ে ঘুড়ি বানানো ও উড়ানোর আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন,আমরা বাঙালী , ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে আমাদের বাঙালির আদি ঐতিহ্য প্রকাশ পেয়েছে।

পাখি প্রেমি ও পরিবেশ কর্মী ফজলে রাব্বী বলেন,দেশের এমন পরিস্থিতে ঘুড়ি উড়ানোর এই আয়োজন অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে মানুষের মনে। তাছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যেও ব্যাপকভাবে সারা জাগিয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজন। বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন নলডাঙ্গা উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।

আরও দেখুন

সিংড়ায় যৌথবাহিনীর ব্যাপক তল্লাশি

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,, সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় যৌথবাহিনী। এসময় তাদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, কাভার্ড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *