নিজস্ব প্রতিবেদক,লালপুর: নাটোরের লালপুরের গোপালপুরে অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের বিদায়ী এমডি আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে।গতকাল বিকেলে তিনি তার শেষ কার্য দিবসে বিদায় সম্মাননা নিয়েছেন।কিন্তু বিদায় কালেও তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে দূর্নীতির বিশাল অভিযোগ।মিলের মোলাসেস বিক্রি,পুরোনো বাতিল যন্ত্রপাতি টেন্ডার ছাড়া গোপনে বিক্রি, আখের খামারে আগুন লাগানো,আখ চাষীদের সময়মত আখের মূল্য পরিশোধ না করাসহ এই সুগার মিলসকে লোকসানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।সম্প্রতি পল্লী উন্নয়ন ফান্ড থেকে মিলের কয়েকটি রাস্তা ও পুরাতন ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত ৭০ লাখ টাকার টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শর্তানুযায়ী দরপত্র গ্রহণের পর লটারি না করে স্থানীয় নিজস্ব লোকদের মধ্যে কাজগুলি ভাগবাটোয়ারা করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। স্থানীয় সূত্র ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারদের মাধ্যমে জানা যায়, চিনিকলের ৭টি গ্রুপে রাস্তা ও পুরাতন ভবন সংস্কারের জন্য ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। সংস্কার কাজ সম্পন্নের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। কয়েকটি ঠিকাদার গ্রুপ দরপত্রে অংশ নেন। শর্ত অনুযায়ী দরপত্রে অংশ নেয়া ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে লটারি করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পছন্দমত ঠিকাদারদের ডেকে বেশিরভাগ ঠিকাদারকে খবর না দিয়ে গোপনে সংস্কার কাজগুলি নিজের লোকজনের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বঞ্চিত কয়েকজন ঠিকাদাররা বলেন, সামান্য সংস্কার কাজেও মিলের এমডি ও প্রকৌশলী গোপনে সংস্কার কাজের বরাদ্দ দিয়েছে। যা আমাদের চরম হতাশ করেছে।মির্জা খোকন ও আবুল কাশেমসহ কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন যে, একই দরে তারা দরপত্রের ৭টি গ্রুপেই অংশ নেন। শর্তানুযায়ী লটারির কথা থাকলেও গোপনে কাজগুলি ভাগবাটোয়া করা হয়েছে ।এই চিনি কলে সম্প্রতি অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তিনি পুনরায় টেন্ডার আহবানের দাবী জানান।
চিনিকলের প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, বিধি ও শর্ত অনুযায়ী দরপত্র আহবান ও দাখিল হয়।এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী ও ১ ফেব্রুয়ারী দু’টি পত্রিকায় চিনিকলের সেবা খাতের রাস্তা ও জীর্ণ ভবন উন্নয়নের ৭টি গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। টেন্ডার দাখিলের দিন ধার্য ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারী। প্রায় ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দের এই কাজগুলি একই দরে প্রায় ২১ জন ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করেন। ফলে লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। প্রায় ১৫ জন ঠিকাদারের উপস্থিতিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যরা লটারি করার সময় আসতে না পারায় টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ঠিকাদার নিয়োগসহ কার্যাদেশ প্রদানে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। সবার উপস্থিতিতে লটারি করা হয়েছে। অন্তত ১৫ জন ঠিকাদার উপস্থিত ছিলেন। যারা কাজ পাননি তাদের দু’একজন হয়ত আবেগের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের অভিযোগ করছেন। যা মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ইতিপূর্বে মিলের মোলাসেস বিক্রিতে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছিল। মোলাসেস পরিবহনে টেন্ডার আহবান করলে ১৫জন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন্ এর মধ্যে তার পরিচিত ঠিকাদার কুষ্টিয়ার জিয়াউল হক রিয়াদকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কম দরে মোলাসেস পরিবহনের দর দিলেও এমডি আব্দুল কাদের স্থানীয়দের না দিয়ে রিয়াদকে দেন।মোলাসেস পরিবহনের সময় চুক্তির চাইতেও বেশি সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া যায়।এতে মোলাসেস পরিবহনের সময় অনিয়মের কারণে রিয়াদকে কালো তালিকা ভূক্ত করে কেরু এন্ড কোং। মোলাসেস বিক্রিতে দূর্নীতি সম্পর্কে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না। তিনি প্রোডাকশান ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের সাথে কথা বলতে বলেন।তার বিরুদ্ধে এতো সব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অন্যজনকে ফোন ধরিয়ে দেন।