নিউজ ডেস্ক:
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে ভোটগ্রহণ। এ ক্ষেত্রে দুর্গম এলাকাগুলো বাদে সারা দেশে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এমন তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনে কে আসবে, না আসবে তা সময় বলে দেবে বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভোটের প্রস্তুতিতে নির্বাচন কমিশন পিছিয়ে নেই। তফসিল ঘোষণা হলে দলগুলো ভোটমুখী হয়। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেছেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, চর অঞ্চল ও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালেই ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে। ব্যালটের নিরাপত্তার জন্য, যাতে ব্যালটের মিস ইউজ না হয় সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত যেসব নির্বাচন কাগজের ব্যালটে হয়েছে, সেখানে সকালেই ব্যালট পাঠানো হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও দুর্গম চরাঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল ও পাহাড়ি কিছু এলাকা বাদে অন্য এলাকাগুলোতে সকালেই ব্যালট পাঠানো হবে, কমিশনের ইচ্ছা সে রকমই। ব্যালটের নিরাপত্তা এবং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে অনেক জায়গায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। গত নির্বাচনের প্রশ্নে আনিছুর রহমান বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের সময় তারা দায়িত্বে ছিলেন না। তাই ওই বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সে ক্ষেত্রে ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী, ভোটের তারিখের আগে ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য সময় রাখা হয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্তত ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তফসিল ডিসেম্বরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিলের আভাস দিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, কমিশন আলোচনা করে ‘যথাসময়ে’ তফসিল দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলেছি ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের কথা। কাজেই ডিসেম্বরে তো যেতে পারব না, অন্তত ৪৫ দিন আগেই তফসিল দিই সাধারণত। আশা করা যায়, সব প্রস্তুত হয়ে গেলে সিইসি মহোদয় যে সময় বলেছেন, ওই সময়ে তফসিল দেওয়া যাবে। তফসিল হয়ে গেলে অনলাইনে মনোনয়ন জমার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সে কারণে তার আগেই নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা অ্যাপ চালু করতে হবে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ও মাঠপর্যায়ে প্রার্থীরা শক্তি এবং সামর্থ্য প্রদর্শন করতে না পারে সে জন্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থীদের (মনোনয়পত্র দাখিল) আবেদন অ্যাপসে করার পদক্ষেপ নিচ্ছে কমিশন। এ ছাড়া এ অ্যাপসের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল ও কোন কেন্দ্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কারা দায়িত্ব পালন করছেন সেটিও জানা যাবে। আগামী নভেম্বরে এটি লাইভে আসবে। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, ভোটার, দল, প্রার্থী, প্রতীক, ছবি, ভোট কেন্দ্রের তথ্য জানানোসহ একগুচ্ছ সেবা দিতে ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ’ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আনিছুর রহমান বলেন, ‘যে অবস্থায় রয়েছে, আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না, নভেম্বরে চালু করতে পারব।’
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে সিইসির দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সিইসি মহোদয় তো বলে দিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে তফসিল হবে। আপনারা জানেন, তিনি নভেম্বরের কথাই তো বলেছেন।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে তা স্পষ্ট করে না জানালেও ৩০ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, অক্টোবরের আগে তারা তফসিল দিচ্ছেন না। তিনি সেদিন বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনাও হয়নি, সিদ্ধান্ত হয়নি। অক্টোবরের আগে তফসিল দেওয়া সম্ভব না।’