নিউজ ডেস্ক:
এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে জাতীয় ডেবিট কার্ড চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বিদেশি কার্ড প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আটটি ব্যাংক নিয়ে এর পাইলটিং কার্যক্রম করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি চালু হবে। পরবর্তীকালে টাকা-রুপিতে লেনদেনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সেবার বেশির ভাগই বিদেশি ভিসা, এমেক্স অথবা মার্স্টারকার্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই ‘টাকা পে’ নামে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই কার্ড ব্যবহার করে দেশের ভেতরে কেনাকাটা করা যাবে।
দেশের একাধিক ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা জানিয়েছেন, জাতীয় ডেবিট কার্ড চালুর মধ্য দিয়ে লেনদেনে নতুন যুগের সূচনা করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহারের চার্জ কমিয়ে সর্বনিম্নে নামিয়ে আনবে। যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের এ কার্ড ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।
জাতীয় কার্ডের সুবিধা কী: এই কার্ডের কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে পাইলটিং করছে আট ব্যাংক। এসব ব্যাংকের কয়েকজন কার্ড বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ কার্ড চালুর মধ্য দিয়ে কার্ডে বিভিন্ন ফিচার যেমন ডুয়েল কারেন্সির মত সুবিধা যুক্ত করে এর মাধ্যমেই টাকা-রুপিতে লেনদেনের সুবিধা পাওয়া যাবে। মুদ্রার বিনিময়ের কারণে যে ক্ষতি হতো, সেটা আর হবে না। এতে ৬ শতাংশের মতো মুদ্রা ব্যয় সাশ্রয় হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কার্ড ব্যবহারের চার্জ কমিয়ে তাদের গ্রাহকদের ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করবে। কার্ড চালু হলে এর মধ্য দিয়ে বিদেশি কার্ডের নির্ভরতা কমবে। ভিসা, মাস্টারকার্ড বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ডের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক কার্ড স্কিমগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে। এখন আন্তর্জাতিক কার্ড স্কিমগুলো যা নির্ধারণ করে দেয়, তা-ই মানতে হয়। এবং বিদেশি কার্ড প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
অসুবিধা কী: ব্যাংককাররা বলছেন, ডিজিটাল প্রতারণার ঝুঁকি সব সময়ই রয়েছে। কাস্টমারকে যথাযথ শিক্ষিত বা অভ্যস্ত করার আগ পর্যন্ত কিছু জটিলতা তৈরি হবে যেমন প্রতারিত হতে পারে বা ব্যবহার না জানার কারণে আগ্রহ হারাতে পারে। কার্ড ক্লোনিং বা আরও আধুনিক প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল মঙ্গলবার ইত্তেফাককে বলেন, প্রাথমিকভাবে আটটি ব্যাংক নিয়ে পাইলটিং কার্যক্রম করা হচ্ছে। তিনি জানান, এই ডেবিট কার্ড ভারতীয় রুপির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। কেউ ভারতে গেলে ভ্রমণকারীর ১২ হাজার ডলারের যে ভ্রমণ কোটা আছে, সেই পরিমাণ অর্থ তিনি রুপিতে কেনাকাটা করতে পারবেন। ফলে ডলারে রূপান্তর এবং এর পরে রুপিতে খরচ করার ফলে মুদ্রার বিনিময়ে যে ক্ষতি হতো, সেটা আর হবে না। তাতে দেখা গেছে, ৬ শতাংশের মতো অপচয় কমবে। বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন ভারতে। এতে অনেক ডলার বাঁচবে।
সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড এমডি মো. আফজাল করিম ইত্তেফাককে বলেন, এখন যেসব কার্ড ব্যবহার করা হয় তা সবই বিদেশি কোম্পানির কার্ড। এ কার্ডের লেনদেন দেশে এবং বিদেশে দুই জায়গাতে হয়। তবে লেনদেনের ৯০ শতাংশ দেশেই হয়। এ লেনদেনের যে ফি হয় তা ডলার বা ফরেন কারেন্সিতে পরিশোধ করতে হয়।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি ন্যাশনাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। নিজস্বতার নতুন মোড়ক উন্মোচন হলে এক কার্ডেই মিলবে একাধিক ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের সুবিধা। চার্জ ও ফি কমবে গ্রাহকের।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে প্রধান করে দুটি কমিটি হয়েছে। এ সেবায় যুক্ত হয়ে সব ব্যাংকের এটিএম বুথ ও পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহকরা। অর্থাৎ, অন্যান্য ডেবিট কার্ডের মতোই ব্যবহার করা যাবে ‘টাকা পে’।
এই কার্ডের কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে পাইলটিং করছে যে আটটি স্থানীয় ব্যাংক, সেগুলো হচ্ছে—ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।