মঙ্গলবার , ডিসেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / ধর্ম / নবীজি (সা.) এর মুখে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের বর্ণনা

নবীজি (সা.) এর মুখে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের বর্ণনা

ধর্ম ডেস্ক, নারদ বার্তা
‘মা’ কথাটি অতি ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর পরিধি বিশাল। জন্মের পর থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতা –ভালোবাসার নয়, ক্ষমতা ও অধিকারেরও যেন সর্বোচ্চ মর্যাদার। 

মায়ের দয়া অনুগ্রহ ছাড়া কোনো সন্তানই বেঁচে থাকাতে পারে না। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ও শান্তির জায়গা হলো মায়ের কোল। নিরাপত্তা আর মমতায় গড়া সেই কোল। পরম শান্তির পরশে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায় সবার মন। জন্মের পর থেকে বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাকে ঘিরে জমা হয় ভালোবাসা আর কত অভিমান। তাই মা-কে কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না।

মা-এর সঙ্গে কেন খারাপ আচরণ করা যাবে না এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,  ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারোর  ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্বশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলিও না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল।’ (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩)। 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ ( সূরা: লোকমান, আয়াত: ১৪)

দুনিয়াতে মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের চেয়ে মধুর সম্পর্ক আর নেই। নদী প্রবাহ যেমন কোনো দিন থেমে থাকে না, মায়ের ভালোবাসা ও সেইরকমই যার কোনো সীমারেখা নেই। সন্তানই মায়ের কাছে পৃথিবীর সব। সন্তানকে নিয়েই রচিত হয় মায়ের স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার এক নতুন পৃথিবী। নিজের জীবনের সব আশা-আকাঙ্খাকে তুচ্ছ মনে করে সন্তানদের সকল চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হয়। সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে তার বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত দায়িত্ব পরম যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন মা। যে মা সন্তানকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেন, ভূমিষ্ট হওয়ার পর অপরিসীম মায়া-মমতায় পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলেন, সেই সন্তানই যখন কোনো কিছুতেই সেই মায়ের অবদানের পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে পারে না তার মতো হতভাগা আর নেই। মায়ের সঙ্গে কোনো তুলনা হয় না। শ্রদ্ধা, সম্মান, ও ভালো আচরণ দিয়ে মায়ের অবদানের প্রতিদান দিতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। (মাতৃচরণে জান্নাত) (কানযুলউম্মাল)। প্রতিটি মানুষের জীবনে মায়ের স্থান সবার উপরে। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন নেই।
 
রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে স্বামীর আর পুরুষের ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের (কানযুল উম্মাল)। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে পিতা-মাতার সঙ্গে সব্দ্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরীক করার জন্য বল প্রয়োগ করে যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। (সূরা: আনকাবুত, আয়াত: ০৮)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট জিজ্ঞেস করেছিল, আমার ওপর কার অধিকার সবচেয়ে বেশি? তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। তারপর কার? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল তারপর কার? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন,  তোমার মায়ের। চতুর্থবার লোকটি জিজ্ঞেস করলে রাসূল (সা.) বললেন, তোমার পিতার (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)। উক্ত হাদিসে মাতার প্রতি তিনবার সদাচরণের কথা বলা হয়েছে এবং চতুর্থবার পিতার কথা উল্লেখ রয়েছে, মুহাদ্দিসগণ এর বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো, সন্তানের জন্য মাতার এমন তিনটি কষ্ট ভোগ করেন যাতে একমাত্র অংশিদারিত্ব হলো মায়ের। এখানে পিতার কোনো দখল নেই।
 
সেগুলো হচ্ছে- ১.সন্তান গর্ভেধারণ ২.সন্তান প্রসব ৩. দুগ্ধ পান করানো। এই তিনটি কষ্টের স্বীকৃতিস্বরুপ মায়ের প্রতি তিনবার সদাচরণের কথা বলা হয়েছে। জাহিলি যুগে নারীরা ছিল অধিকারের ক্ষেত্রে পশ্চাদপদ। ইসলামে নারীর মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে মায়ের সঙ্গে অধিক সদাচরণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জান্নাত লাভের আশা রয়েছে। দুনিয়াতে ভালো কাজ করে অধিক সওয়াবের আশায় একব্যক্তি নবীজী (সা.) এর কাছে এসে বলল, আমি আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের ব্যাপারে শপথ করছি। নবীজী (সা.) বললেন, তোমার পিতা-মাতার কোনো একজন জীবিত আছে কি? লোকটি বলল হ্যাঁ। বরং উভয়েই। তিনি বললেন, তুমি কি আল্লাহর কাছে সওয়াব আশা কর? লোকটি বলল হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবাহার করো। (বুখারী-মুসলিম)

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, তিন জনের দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া। (তিরমিযি)।

সাম্প্রতিক পৃথিবীতে সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। চাকরি বা কর্মব্যস্ততার মাঝে মা কারোর কাছে থাকেন, কারোর থেকে থাকেন দূরে, কারোর আবার মা বেঁচে নেই। মা যেখানেই থাকুক না কেন, মা আছেন সবার হৃদয়ে সবসময়। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের দরজা। যদি চাও দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো। নতুবা তা সংরক্ষণ করতে পার। (তিরমিযি)।

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, সর্বোত্তম কাজ হলো পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। (সহীহ বুখারী ও মসুলিম শরীফ)।

পিতা-মাতাকে কষ্ট দিয়ে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে কোনোদিন কেউ ভালো থাকতে পারে না। পিতা-মাতার বদদোয়ায় সন্তানের ইহকাল ও পরকালের সব ধ্বংস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বললেন, ধ্বংস হোজ, ধ্বংস হোক পুত্ররা ধ্বংস হোক, সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, অথচ সে তাদের খিদমত করে জান্নাতে যেতে পারেনি। (সহীহ মুসলিম)। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ কোনগুলো তা বলব না?

সাহাবাগণ বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, এতটুকু বলে নবী করিম (সা.) বসে পড়লেন। (তিরমিযি শরীফ)। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অন্যতম কবীরা গুনাহ হলো কোনো ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা। সাহাবাগণ বললেন, পিতা-মাতাকেও কি কেউ গালমন্দ করে? উত্তরে নবীজী (সা.) বললেন, হ্যাঁ। কেউ কারো পিতা-মাতাকে গালি দিলে সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়। এভাবে অন্যের পিতা-মাতাকে গালমন্দ করলে প্রকারান্তরে নিজের পিতা-মাতাকেই গালমন্দ করা হয়। (তিরমিযি শরীফ)। 

অবশেষে বলতে চাই মা সদ্যজাত শিশুর প্রথম ভালোবাসা। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেখা যায়। পৃথিবীর সব সন্তানের হৃদয় পূর্ণ থাক মাতৃভক্তিতে। কারো কোনো আচরণ যেন মায়ের কান্নার কারণ এবং বৃদ্ধাশ্রম যেন কোনো মায়ের ঠিকানা না হয়। কারণ এটা সন্তানের জন্য একটি অভিশাপ। সব সন্তানেরই এটা মনে রাখা উচিত যে, আমরা জন্মেই দেখি মাকে। দেখি মায়ের মুখ। অনুভব করি মায়ের যত্ন ভালোবাসা। 

মাকে নিয়ে কত কবি লিখেছে কবিতা, কত গায়ক গাইছে গান। কবি ক্রিষ্টিনা রসেটির মতে, ‘যে ঘরে মা আছে সে ঘরে শৃঙ্খলা আছে।’ আব্রাহাম লিঙ্কণ বলেছেন, ‘যার মা আছে সে কখনোই গরীব না। হৃদয় নিংড়ানো সব অনুভূতির মূলে আছেন মমতাময়ী মা।’ 

সব শেষে আমি আমার ভাষায় বলতে চাই-

মা তুমি যে কত কষ্ট করেছ মোর লাগি।
শুশ্রুষা করেছো মোরে দিবা-রাত্রি জাগি।
পারবো না মা দিতে কভূ তোমার কষ্টের ঋণ
হবে না মা সম্ভব যে তা কখনো বা কোনো দিন।
তোমার সেবা করবো আমি সদা-সর্বদা
আল্লাহ রাসূলের (সা.) পরে যে তোমার মর্যাদা
তুমি আমার আঁখি-হস্ত তুমি আমার সর্ব
তুমি আমার হৃদয়খনি তুমি আমার গর্ব।
তোমাদের দোয়া করি মা-বাবা ওই প্রভূর দরবারে
অশেষ শান্তি দিও দুনিয়া ও পরপারে।

আরও দেখুন

নাটোরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বিষয়ক কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,,,,,,,,,বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৪-২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ই- গভন্যাস ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ …