নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,, বগুড়ার নন্দীগ্রামে পুরোদমে চলছে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। এর পাশাপাশি কৃষকদের ঘরেঘরে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। শস্যভান্ডার খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলায় বছরে ৩বার ধান চাষাবাদের পাশাপাশি ১বার রবি শস্যের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। নন্দীগ্রাম উপজেলার মাটিতে উর্বরতা বেশি থাকায় মোট ৪বার ভালোভাবে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। নন্দীগ্রাম উপজেলায় আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টির কারণে আমন ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে কিন্তু সব জমিতে নয়। বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়। এখন পুরোদমে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। আমন ধানের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পেয়ে কৃষকরা খুশিতেই রয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে বেশিরভাগ জমিতে ব্রিধান-৩৪, ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৭৫, ব্রিধান-৯০, ব্রিধান-১০৩, বিনা-৭ ও বিনা-১৭ ধান চাষাবাদ করা হয়। এবার আমন মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ৮০ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন মাঠের ফসলি জমির দিকে তাকালেই দেখা যায় উজ্জ্বল ঝলমল সোনালি ফসল ধান। গ্রামগঞ্জের কৃষকরা এখন সোনালি ফসল ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত রয়েছে। স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শ্রমিক দিয়ে কৃষকরা আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে নিচ্ছে। হাটলাল গ্রামের আদর্শ কৃষক মিনহাজুর রহমান হাবিব জানান, আমাদের এলাকায় প্রতিবিঘা জমিতে ১৫-১৬ মণ হারে আমন ধানের ফলন হয়েছে (আবার কমবেশিও হতে পারে)। প্রতিবিঘা জমির আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে নিতে শ্রমিকদের ২৫০০-৩০০০ ঢাকা পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। বর্তমান ধানের বাজারমূল্য ব্রিধান-৪৯ ১৩০০-১৩৫০ ও ব্রিধান-৯০ ১৬০০-১৭০০ টাকা মণ দরে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। ধানের রকম ভেদে বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়। আমন ধান চাষাবাদের খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রতিবিঘায় ৭-৮ হাজার টাকা লাভ হয় (আবার কমবেশিও হতে পার)।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, সবধরনের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। আর এই উপজেলার কৃষকরা সবধরনের ফসল উৎপাদনে অনেক পারদর্শী। আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলি জমিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হয়েছে। সেকারণে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে।
দমদমা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বাচ্চু বলেন, আমরা প্রতিবছর আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলাকালেই ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব পালন করে থাকি। নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে গ্রামে গরু-মহিষ জবাই করে ও বড় মাছ কিনে এনে ভুড়িভোজের আয়োজন করি। নবান্ন উৎসবে আত্মীয়-স্বজন ও জামাই-ঝিদের দাওয়াত করা হয়। নতুন চালের ভাত, বিরিয়ানি, পায়েস ও পিঠা-পুলিসহ নানারকম খাবার তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জের চারিদিকে এখন নতুন চালের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষকরা সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব পালন করে। মুসলিম কৃষকরা বঙ্গাব্দের পহেলা অগ্রহায়ণ থেকে সুবিধামতো সময়ে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। নন্দীগ্রাম পূর্বপাড়ার কৃষক অসিম কুমার রায় বলেন, রবিবার (১৭ নভেম্বর) আমরা নবান্ন উৎসব পালন করেছি।