নিউজ ডেস্ক:
নতুন বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে দেশের শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বছরের প্রথম সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তথ্য বলছে, বাজারের সূচক ৭ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে।
নতুন বছরের পঞ্চম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এদিন সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন। ফলে টানা ছয় কার্যদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হলো। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচক বেড়েছে।
তথ্য বলছে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার কোটা অতিক্রম করেছে, যা দুই মাস ৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গত বছরের শেষ কয়েক দিনের মন্দাভাব অনেকাংশে কেটে যাচ্ছে। বিশেষ করে ভালো মৌলভিত্তি ও বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের গুরুত্ব বাড়ছে। এরমধ্যে বাজারে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ ছিল সদ্য বিদায়ী বছরের পরিচালন মুনাফা। বছরের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও আশা জাগিয়েছে। একইভাবে করোনার মধ্যেও শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসা এখন রমরমা।
সার্বিকভাবে বড় ধরনের উত্থান দিয়ে ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন এক সপ্তাহেই সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। সেইসঙ্গে বড় উত্থান হয়েছে সবকটি মূল্যসূচকের। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন।
বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৪২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির। আর ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৩০ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৫৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট। তার আগে টানা দুই সপ্তাহ সূচকটি কমে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৮২ পয়েন্ট কমে যায়।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি ৪১ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ৭০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ২০ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট।
বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেলো সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৮৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ১৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বাজারের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৯৯ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪২ কোটি ৮৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২৭৪ কোটি ৭৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।