সুরজিত সরকার
চৈত্র মাস। থেমে নেই প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলা। নদী শুকিয়ে গেছে প্রায়। শুকনো নদীর তীরে নৌকা মেরামতের কাজ চলছে। নতুন বছরে নদীতে জল আসলে নৌকা নামানো হয় জলে, গ্রামে সে এক আনন্দের বিষয়। বিশেষ করে কৈশর বয়সীদের জন্য। নৌকা জলে নামিয়ে নৌকার মালিকের পক্ষ থেকে খাওয়া যায়। এবারও চলছে সেই নিয়মে। নদী শুকিয়ে গেছে। নৌকা মেরামত চলছে। পারঘাটায় এখন আর বসে থাকতে হয় না। যেটুকু জল রয়েছে ছোট আঁড় দিয়ে বাচ্চা ছেলেরাও অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারছে। দিন সাতেকের মধ্যে হয়ত নদীর মধ্যে ধূলো পায়ে পার হওয়া যাবে।
চৈত্র সংক্রান্তিতে হলদার পাড়ায় আয়োজন হতো চড়ক। মেলা বসত। পহেলা বৈশাখের সকালে হিন্দু পাড়ায় পূজা, আর দেশ জুড়ে নতুন বছরকে বরণের আয়োজনসহ নানা রকম লৌকিক আচার অনুষ্ঠান। সব কিছুতেই যেন উৎসবের আমেজ। আজ শুরু হলো কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন একটি বছরের।
বাংলা বছরের গাণিতিক নামটি প্রচলন হয়েছিল সম্রাট আকবরের হাত ধরে। সে হিসেব মতে, নতুন বছরটির নাম ১৪২৭। এবার তেমন একটা আনগোনা নেই, বলা চলে মাথা ঘামানো নেই কারও, কেমন যাবে নতুন বছর। আয়োজন তো নেই। ছেদ পরেছে সব কিছুতেই। নিত্য দিনের পেটের আয়োজন করতে দিশেহারা সবাই সেখানে নতুন বছরের আয়োজন এবার আলমারির তাকে সাজানো হয়ে গেছে। আমুদে বাঙ্গালী জাতি হয়ত সেটুকুও করত।
কিন্তু সব কিছুতে বাধ সেধে বসে আছে অদৃশ্য এক শত্রু। আকার, আয়তনে এতটা ছোট খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না অথচ তার প্রকোপ এতটা এতটা বেশি যে পুরো পৃথিবী দিশেহারা। সারা পৃথিবীর মানুষ অজানা আতংকে রয়েছে। কি হবে আগামী কাল বা আগামী দিন কোন হিসেব নিকেশ করতে পারছে না কেউ। অথচ আজকের দিনে হিসেবের নতুন খাতা খোলার ছিল। ছিল হালখাতায় মিষ্টি মুখ করা। পৃথিবীর তাবড় তাবড় দেশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। যে মানুষ এক সময় জঙ্গলকে বানিয়েছিল বসবাসের উপযোগী তারা এখন ঘরবন্দি। ভারসাম্যহীন পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রকৃতি নিজ হাতে তুলে নিয়েছে করোনার আয়োজন নাকি চীনাদের অতি ক্ষমতার লোভের ফল ভোগ করতে হচ্ছে মানব জাতিকে। সে প্রশ্নের উত্তর সময় দিবে কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ পারবে তো মহামারি এই করোনার প্রকোপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে।
নতুন বছর নতুন সূর্য কি নতুন কোন বার্তা নিয়ে আসবে। নতুন বছরের সকালে মানুষ ঘুম থেকে উঠে শুনতে পাবে কি, করোনা মুক্ত পৃথিবীর কথা। মহামারির পর পৃথিবীর অর্থনীতিতে কোন বিরুপ পরিস্থিতি তৈরী হবে না। পৃথিবীর প্রত্যকটি প্রান্তের মানুষ ক্ষুধাহীন থাকবে। পুঁজিবাদীর যাতাকল বন্ধ হবে। ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করা ধাপ্পাবাজরা পথ ভুল করে হলেও মানুষের জন্য কাজ করবে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে তৈরী হবে না কোন রাজনীতি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার আয়োজন যদি হয় করোনা তাহলে প্রকৃতি নিশ্চয় তার আয়োজনের হালখাতায় হিসেব লিখবে মানুষের জন্য আর যদি করোনা মানুষের তৈরী ক্ষমতার অস্ত্র হয় সেটিও যেন জয়ী করে, মানুষের জন্য মানুষকে বাঁচতে শেখায়।
শুকনো নদীতে জল আসবে প্রাণ ফিরে পাবে প্রান্তিক জনপদ। মানুষের হক মেরে খাওয়া প্রতিনিধিরা এক পলকে পাল্টে ফেলবে নিজেদের। ১৪২৭ সালটি এক বছরেই হারিয়ে যাবে কালের অতলে, তবুও যেন লেখা থাকে করোনা নামক মহামারির পরাজয় কাহিনী এই বছরেই হয়েছিল। নতুন বছর নতুন করে শুরু হোক। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী।
লেখক: কবি, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী